প্রবন্ধ - বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

 বিজ্ঞান ও কুসংস্কার


ভূমিকা : 

       বিশেষ জ্ঞানই হল বিজ্ঞান। অনুমান নির্ভরতা থেকে বিজ্ঞান দেয় যুক্তির বন্ধনে মুক্তি, সত্যের সাক্ষাৎ অনুভূতি। তথ্য ও সত্যের সহবস্থানে বিজ্ঞানের চিন্তা তৈরি হয়েছে। সেই জন্য বিজ্ঞান ও কুসংস্কার একই আসনে বসতে পারে না। বিজ্ঞানের আলোর স্পর্শে কুসংস্কারের অন্ধকার দূর হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজনে বিজ্ঞান সবসময় কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই করে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি জগত সভায় সুপ্রতিষ্ঠিত করে চলেছে, আশা করি ভবিষ্যতে সেই কাজ আরো সুদৃঢ় হবে। তবেই একদিন কুসংস্কারের মায়াজাল ভেঙে বিজ্ঞান মানবসমাজে সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।


বিজ্ঞান ও কুসংস্কার : 

      বুদ্ধি ও বিচার দিয়ে কোনো কিছুকে গ্রহণ করা হল বিজ্ঞান। সেই জন্য বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে মানুষকে, মানবসভ্যতাকে যা কিছুই পশ্চাৎমুখী করে তাই কুসংস্কার। আজ বিজ্ঞানের রথের চাকা পৌঁছে গেছে মহাকাশে, নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে উঠেছে মানুষ। সমগ্র বিশ্বকে এই বিজ্ঞান বশ মানিয়েছে। তবে বিজ্ঞান নির্ভর মানুষের মধ্যেও কুসংস্কার বাসা বেঁধেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলতে হয় এক শালিক দেখে দিন খারাপ যাওয়া, বিড়ালের পথ কেটে দেওয়া, এক চোখ দেখানো ইত্যাদি ৷


বর্তমান যুগের কুসংস্কার : 

           বর্তমান যুগেও সমাজের সর্বত্র লুকিয়ে আছে কুসংস্কার। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ডিম খাবে না, কলা খাবে না এটা সর্বস্তরেই চোখে পরে। যারা খেলোয়াড় তারা মনে মনে কুসংস্কার পুষে রাখে, ভাবে বিশেষ পোশাক বা নাম্বারটা তার জয়ের কারণ। ডাক্তারবাবুরাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নানান কুসংস্কার মেনে চলছেন। এখনও সমাজে ডাইনি প্রথা, কন্যাভ্রূণ হত্যা নানারকম কুসংস্কার বিদ্যমান ।


কুসংস্কার দূর করার উপায় : 

         মানব সমাজের এতো গভীরে এই কুসংস্কার শিকড় চালিয়েছে যে তা দূর করা এতো সহজ নয়, তবে অসাধ্যও নয়। তাই বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীরা সমাজে যখনই অন্ধকার থাবা বসিয়েছে তখনই যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে তা মিথ্যা প্রমাণ করেছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে কুসংস্কার দূর করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে, না আসলে সহযোগিতা করতে হবে। উপায় - 

(ক) প্রথমেই সকলকে শিক্ষার ছাতার তলায় নিয়ে আসতে হবে। 

(খ) ম্যাজিক করে দর্শকদের বুঝিয়ে দিতে হবে। 

(গ) দেয়াল লিখন, হোর্ডিং, ব্যানারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

(ঘ) লোকসংগীতের মাধ্যমে নাটক বা বিভিন্ন গ্রাম সভার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। 

(ঙ) কোথাও কোনো সুসংস্কারমুখী ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা সেখানে পৌঁছে হাতে কলমে প্রয়োগ করে ঘটনাটা ব্যাখ্যা করে দেবে।


কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :

          ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেকে নিজের পড়াটা বুদ্ধি ও যুক্তি দিয়ে যদি গ্রহণ করে তবে কেউ সেই বিষয় নিয়ে যদি কোনো কুসংস্কারপূর্ণ কথা বলে তাহলে ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে যেন বুঝিয়ে দেয়। নানান বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও গ্রাম সভার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবে।


উপসংহার : 

         জীবন প্রবহমান তাই আমাদের উচিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলা। যদি মানুষ এই দর্শনকে মানতে পারে তবে কোনো কুসংস্কার তার মনে বাসা বাঁধতে পারবে না। আমাদের কর্তব্য বিজ্ঞানের প্রবহমানতার সঙ্গে মিলেমিশে নিজেদের কুসংস্কারগুলোকে দূর করা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url