চিত্রসহ পৃথিবীর তাপ মন্ডল এর বিবরণ দাও ( উষ্ণমন্ডল, নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল, হিম মন্ডল) / সমোষ্ণরেখা, সমোষ্ণরেখার বৈশিষ্ট্য , সমোষ্ণরেখার গুরুত্ব

 পৃথিবীর তাপমন্ডল


            নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারা বছর লম্বভাবে বা প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া যায় সূর্যরশ্মি ততই তির্যকভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের উষ্ণতা বিভিন্ন হয়। অক্ষাংশ অনুসারে একই ধরনের উষ্ণতা যুক্ত অঞ্চলগুলিকে তাপমন্ডল বলে।

           পৃথিবী ব্যাপী পাঁচটি তাপমন্ডল অবস্থান করলেও  তাপ মন্ডলকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 


ক) উষ্ণমন্ডল

  ১. অবস্থান 

       ২৩° ৩০' উত্তর অক্ষরেখা ( কর্কটক্রান্তি রেখা ) থেকে ২৩° ৩০' দক্ষিণ অক্ষরেখার ( মকরক্রান্তি রেখা) মধ্যবর্তী অঞ্চলে সারা বছর সূর্যরশ্মি লম্ব ভাবে কিরণ দেওয়ায় এখানকার উষ্ণতা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের উষ্ণতার থেকে অনেক বেশি, তাই একে উষ্ণমন্ডল বলে।


   ২. উৎপত্তির কারণ 

  1. এখানে সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে পতিত হওয়ায় আগত সৌরশক্তি এখানে বেশি হয়।
  2. সারা বছর দিনও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে।


    ৩. অবস্থিত দেশসমূহ 

            উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো, পানামা, দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, কলম্বিয়া; আফ্রিকার কেনিয়া, উগান্ডা, বুরুন্ডি, জাইরে; এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ ভারত।


     ৪ বৈশিষ্ট্য: 

        i) সূর্যরশ্মির পতন কোণ ৬৬° ৩০' থেকে ৯০° থাকে। 

       ii) বার্ষিক গড় উষ্ণতা ২৭° সেলসিয়াস। 

      iii) ঋতু বৈচিত্র অতটা পরিলক্ষিত হয় না। 

      iv) দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান। 

      v) উষ্ণতার প্রসর খুবই কম। 

      vi) সারা বছর অধিক উষ্ণতা এবং বৃষ্টিপাত। 

পৃথিবীর তাপমন্ডল


খ) নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল

১. অবস্থান 

    ২৩° ৩০'  অক্ষরেখা থেকে ৬৬° ৩০' অক্ষরেখা (মেরু বৃত্ত) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে সূর্যরশ্মি মাঝারি কোন যুক্ত হয়ে বা মাঝারি তির্যকভাবে কিরণ দেয়। ফলে এই অঞ্চলের উষ্ণতা খুব বেশিও হয় না এবং খুব কমও হয় না এ কারণে এই অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে।


২. শ্রেণীবিভাগ

      নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়,-  

      i) উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল এবং 

      ii) দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল।


i) উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল 

          ২৩° ৩০' উত্তর অক্ষরেখা (কর্কটক্রান্তি রেখা) থেকে ৬৬° ৩০' উত্তর অক্ষরেখা (সুমেরু বৃত্ত) পর্যন্ত বিস্তৃত।

ii) দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল 

         ২৩° ৩০' দক্ষিণ অক্ষরেখা (মকর ক্রান্তি রেখা) থেকে ৬৬° ৩০' দক্ষিণ অক্ষরেখা( কুমেরু বৃত্ত) পর্যন্ত বিস্তৃত।


৩. উৎপত্তির কারণ 

           সূর্যরশ্মির পতন কোন মধ্যম প্রকৃতির তবে গ্রীষ্মকালে পতন কোণ একটু বৃদ্ধি পায় এবং শীতকালে পতন কোন একটু কমে যায়। দিন ও রাতের গড় দৈর্ঘ্য সারা বছর মাঝারি থাকে।


৪. অবস্থিত দেশ  

      ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, গ্রীস, পোল্যান্ড, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি।


৫. বৈশিষ্ট্য 

       i.সূর্যরশ্মি ৬৬° ৩০' থেকে ২৩° ৩০' কোণে পতিত হয়।

      ii.এখানে মৃদু উষ্ণ এবং মৃদু শীত যুক্ত জলবায়ু থাকে। 

     iii.গড় উষ্ণতা থাকে ১৮° সেলসিয়াস। 

     iv.বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখানে মাঝারি। ৪০ থেকে ৯৫ সেন্টিমিটার। 

      v.বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর বেশি। 

     vi.কর্কটক্রান্তি রেখা সংলগ্ন অঞ্চল উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল এবং মেরুবৃত্ত রেখার সংলগ্ন অঞ্চল শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলেরর অন্তর্গত।


গ) হিম মন্ডল

১. অবস্থান 

      ৬৬° ৩০' অক্ষরেখা (মেরু বৃত্ত) থেকে ৯০° বা মেরবিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমন্ডলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি অতি তির্যকভাবে কিরণ দেওয়ায় এখানকার তাপমাত্রা খুব কম। এই কারণে এই অঞ্চলকে হিমমণ্ডল বলে।

২. শ্রেণীবিভাগ

      উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দুটি হিমমণ্ডল রয়েছে।-

          i) ৬৬° ৩০' উত্তর অক্ষরেখা বা সুমেরু বৃত্ত থেকে ৯০° বা সুমেরু বিন্দু পর্যন্ত অঞ্চল উত্তর হিমমণ্ডল নামে পরিচিত। 

         ii) ৬৬° ৩০' দক্ষিণ অক্ষরেখা থেকে বা কুমেরু বৃত্ত থেকে ৯০° দক্ষিণ বা কুমেরু বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল দক্ষিণ হিমমন্ডলের অন্তর্গত।


৩. উৎপত্তির কারণ 

      i) এখানে সূর্য রশ্মি অতি তির্যকভাবে কিরণ দেয় ফলে কম পরিমাণ সৌরশক্তি পৌঁছায়। 

     ii) এখানে একটানা ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত্রি বিরাজ করে। 

    iii) দিন এবং রাত্রের দৈর্ঘ্যের তারতম্য অনেক বেশি।


৪. অবস্থিত দেশ 

     নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, উত্তর কানাডা, উত্তর রাশিয়া, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, আন্টার্টিকা।


৫. বৈশিষ্ট্য 

i) সূর্যরশ্মির পতনকোন ২৩° ৩০' থেকে ০°।
ii) এখানে দীর্ঘ এবং তীব্র শীতকাল বিরাজ করে।  
iii) ছয় মাস দিনের সময় সূর্য দিগন্ত রেখার উপর থাকে।  
iv) শীতকালে প্রচন্ড তুষারপাত হয়।  
v) এখানকার উষ্ণতা সবসময় ০° সেলসিয়াস এর নিচে থাকে।  
vi) বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি।  
vii) অধিকাংশ অঞ্চল বরফে ঢাকা থাকে।


সমোষ্ণরেখা

    পৃথিবীপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের গড় উষ্ণতা সমান সেই সকল স্থানকে মানচিত্রে কাল্পনিক রেখা দিয়ে যুক্ত করে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।


১. সমোষ্ণরেখার বৈশিষ্ট্য 

       i) সমোষ্ণরেখাগুলি অক্ষরেখার প্রায় সমান্তরালে অবস্থান করে। 

       ii) উষ্ণতার পার্থক্য বেশি হলে সমোষ্ণরেখাগুলো কাছাকাছি অবস্থান করে। 

      iii) উষ্ণতার পার্থক্য কম হলে সমোষ্ণরেখাগুলি দূরে দূরে অবস্থান করে। 

      iv) স্থলভাগের উপর সমোষ্ণরেখাগুলি কাছাকাছি অবস্থান করে।
 
       v) জলভাগের ওপর সমোষ্ণরেখা গুলি দূরে দূরে অবস্থান করে।

      vi) স্থলভাগ থেকে জলভাগে অথবা জলভাগ থেকে স্থলভাগে প্রবেশ করার সময় সমোষ্ণরেখাগুলি বাঁক নেয়।

     vii) সমোষ্ণরেখাগুলি পরস্পর ছেদ করে না।


২. সমোষ্ণরেখার গুরুত্ব 

      i) সমোষ্ণরেখার সাহায্যে কোন অঞ্চলের উষ্ণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

     ii) উষ্ণতার পরিবর্তনের দিক অর্থাৎ উষ্ণতা কোন দিকে বাড়ছে কোন দিকে কমছে তা সমোষ্ণরেখার সাহায্যে বোঝা যায়। 

    iii) সমগ্র অঞ্চলটিকে কয়েকটি উপ উষ্ণতা অঞ্চলে ভাগ করা যায়।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url