বর্জ্য পদার্থ কি? বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ // বর্জ্য পদার্থের উৎস

 বর্জ্য পদার্থ কি? বা বর্জ্য পদার্থ কাকে বলে?

          মানুষ তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহার করে। ব্যবহার করার পর কিছু অংশ অপ্রয়োজনীয় বা অব্যবহারযোগ্য থেকে যায় যা মানুষ বর্জন করে এই বর্জনীয় পদার্থকে বর্জ্য ( Waste ) বলে। 

           অন্যভাবে বলা যায়-  যে সব বস্তুকে মানুষ বর্জন করতে চায় তাকে বর্জ্য বস্তু বা বর্জ্য পদার্থ বা ওয়েস্ট বলে।

   বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ : 

         গৃহস্থালির দ্রব্য, খাবারের অবশিষ্টাংশ, নির্মাণকাজের বর্জ্য, পরিত্যক্ত কম্পিউটার, টিভি, মোবাইল, তেল, গ্রিজ, মেশিনে ব্যবহৃত মোবিল ইত্যাদি।


বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ :

1) কঠিন বর্জ্য

          যে সকল বর্জ্য পদার্থ সহজে জলে দ্রবীভূত হয় না এবং মূলত কঠিন অবস্থায় পরিবেশে আসে তাকে কঠিন বর্জ্য পদার্থ বলে।

কঠিন বর্জ্য পদার্থের উৎস:

   i) গৃহস্থালি - বাড়ির দৈনন্দিন নোংরা ও জঞ্জাল, খাবারের অবশিষ্টাংশ,  কাচ, কাপ, প্লেট, শিশি, বোতল, আসবাবপত্র প্রভৃতি।

   ii) কৃষিজ বর্জ্য : ধানের তুষ, আখের ছিবড়ে, খড়, সার প্রভৃতি।

   iii) শিল্প: যন্ত্রাংশ, টায়ার ও টিউব, সিমেন্ট কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত পদার্থ প্রভৃতি।

   iv) নির্মাণ কাজ : অ্যাসবেস্টস, রাবিস প্রভৃতি।


2) তরল বর্জ্য : 

         যে সকল বর্জ্য পদার্থ তরল আকারে পরিবেশে মুক্ত হয় তাকে তরল বর্জ্য পদার্থ বলে।

তরল বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ: 

   i) গৃহস্থালি- রান্নাঘর ও বাথরুমের নোংরা জল।

   ii) শিল্প - কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক তরল, রং ।

   iii) যানবাহন - যানবাহন থেকে নির্গত ডিজেল, গ্রিজ, মেশিনে ব্যবহৃত মোবিল।


3) গ্যাসীয় বর্জ্য : 

         যে সকল বর্জ্য পদার্থ পরিবেশে গ্যাস আকারে নির্গত হয় তাকে গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থ বলে।

গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ : 

        মিথেন, যানবাহনের ধোঁয়া, বাজি পোড়ানোর ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, মিথাইল আইসোসায়ানেট (MIC) প্রভৃতি।


4) বিষাক্ত বর্জ্য: 

       যে সকল বর্জ্য পদার্থ দ্বারা জীবদেহে বিষক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে তাকে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বলে।

বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ : 

       সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, ডায়ক্সিন, অ্যাসবেস্টস, কীটনাশক (DDT, BHC, অলড্রিন, এনড্রিন), তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম) ইত্যাদি হল বিষাক্ত বর্জ্যপদার্থ।


5) বিষহীন বর্জ্য পদার্থ :

       যে সকল বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের অতটা ক্ষতি করে না বা খুব কম ক্ষতি করে তাকে বিষহীন বর্জ্য পদার্থ বলে। অধিকাংশ জৈব বিশ্লিষ্ট পদার্থই বিষহীন বর্জ্য পদার্থ।

বিষহীন বর্জ্য পদার্থের উদাহরণ : 

      ধান ও গমের তুষ, খোসা, সবুজ সার, সবজি, ফলের অবশিষ্টাংশ, জীবের মৃতদেহ, মলমূত্র, মৃত উদ্ভিদ, শুকনো পাতা, ডালপালা ইত্যাদি।


বর্জ্য পদার্থের উৎস: 

          আমরা প্রকৃতিতে যে সকল বর্জ্য পদার্থ পাই সেই সকল বর্জ্য পদার্থ কোথা থেকে এসেছে সেই জায়গাগুলিকে আমরা বর্জ্যের উৎস ( Source of waste ) বলি।


১. গৃহস্থালির বর্জ্য : 

      মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গৃহস্থলীতে যে সকল বর্জ্য পদার্থের উৎপত্তি হয় সেগুলি কয়েক রকমের হয়। যেমন,- 

i) পচনশীল বর্জ্য: 

       প্রতিদিনের শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসের উচ্ছিষ্ট, খাদ্যের অবশিষ্ট প্রভৃতি।

ii) অপচনশীল বর্জ্য: 

       কাগজ, কার্ডবোর্ড, প্লাস্টিক প্যাকেট, পুরোনো লোহালক্কড়, অপ্রয়োজনীয় ধাতু,  কাপ, প্লেট, শিশি, বোতল, ভাঙা আসবাবপত্র, ছেঁড়া কাপড়, খালি প্যাকেট, পলিথিন ব্যাগ প্রভৃতি এগুলি জৈব ও অজৈব উভয় প্রকার বর্জ্য।

iii) তরল বর্জ্য: 

       রান্নাঘর ও বাথরুমের নোংরা জল, সাবান জল ইত্যাদি।


২. শিল্প বর্জ্য: 

      বিভিন্ন শিল্প কেন্দ্র থেকে যে সকল বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয়।

   i) কঠিন বর্জ্য: 

        কলকারখানা থেকে ধাতু ও ধাতুমল, ছাই, কাগজের দ্রব্য, স্যান্ডপেপার, রাসায়নিক দ্রাবক, রং, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, ফ্লাই অ্যাশ, কার্বন কণা, ব্যাটারির বিভিন্ন অংশ, পোড়া মোবিল, গ্রিজ ইত্যাদি।

   ii) তরল বর্জ্য: 

         ট্যানারি, রাসায়নিক কারখানা থেকে কর্দমজাতীয় বর্জ্য বের হয়। এ ছাড়া অন্যান্য কলকারখানা থেকে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ইত্যাদি।

   iii) গ্যাসীয় বর্জ্য: 

        কলকারখানার চিমনি দিয়ে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস।


৩. কৃষিজ বর্জ্য: 

         ধানের তুষ, আখের ছিবড়ে, খড়, নারকেলের ছিবড়ে, সার, গোবর প্রভৃতি। এ ছাড়া বিভিন্ন কীটনাশক, আগাছানাশক, নাইট্রোজেন, পটাশ ইত্যাদি।

৪. পৌরসভার বর্জ্য: 

         পৌরসভা অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের গৃহস্থালির বর্জ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা চিকিৎসা কেন্দ্রের বর্জ্য এবং এই অঞ্চলে যে শিল্প কেন্দ্রগুলো অবস্থান করে তা থেকে নির্গত বর্জ্য পৌরসভার বর্জ্যের প্রধান উৎস। যেমন-কাগজ, কাচ, বোতল, ক্যান, ধাতু, নির্দিষ্ট কিছু প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাপড়, ব্যাটারি, প্লাস্টিকের খেলনা, রাসায়নিক, বাল্ব, ফ্লুরোসেন্ট টিউব প্রভৃতি।

৫. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য:  

         রক্ত ও রক্তরসে ভেজা তুলো, ব্যবহৃত ওষুধের ফয়েল, ওষুধের শিশি, ন্যাকড়া, ইনজেকশনের শিশি, সিরিঞ্জ, সূঁচ, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার প্যারিস, সুতো, প্যাথোলজি সংক্রান্ত আবর্জনা, ব্যবহৃত প্লাসটিকের জলের বোতল, বিভিন্ন বর্জিত ওষুধ, কলা ও অন্যান্য ফলের খোসা, কাঁচি, ব্লেড, বর্জিত ছুরি, ডাবের খোসা, চায়ের কাপ, বিড়ির টুকরো, ওষুধের বাক্স প্রভৃতি।

৬. জৈব বর্জ্য: 

        যে সকল বর্জ্য পদার্থ জীব দেহ থেকে নির্গত হয় তাকে জৈব বর্জ্য বলে। যেমন- গাছের পাতা, খড়, ফুল, পচা ফল, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, ডাবের খোলা, প্রাণীর মৃতদেহ, মলমূত্র প্রভৃতি পচনশীল পদার্থ।

৭. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য: 

      ইউরেনিয়াম খনি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, নিউক্লিয়ার রিয়াক্টার, পারমাণবিক অস্ত্র, পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র প্রভৃতি থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url