ভারতে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব
ভারতে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব :
উন্নয়নশীল দেশ ভারতে কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার এবং উন্নতিতে পরিবহন ব্যবস্থার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থার বিভিন্ন গুরুত্বগুলি হল –
১) কৃষির উন্নতি :
ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। ভারতের অর্থনীতি কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন ও সুষ্ঠু বণ্টনের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্নতায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত ফসলের সুষ্ঠু বণ্টনে এবং ঘাটতি অঞ্চলে উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রয়ের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন। ভারতের পরিবহনে সর্বাপেক্ষা অধিক কৃষিজ পণ্য পরিবাহিত হয়।
২) শিল্পের উন্নতি :
শিল্পের উন্নতির জন্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্রে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, শক্তি, শ্রমজীবী প্রভৃতি সরবরাহে এবং শিল্পজাত দ্রব্য বাজারে প্রেরণের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। পরিবহন ব্যয়ের ওপর নির্ভর করেই কোনো স্থানে সাধারণত শিল্প গড়ে ওঠে।
৩) আঞ্চলিক বিশেষীকরণ :
উন্নত পরিবহন ব্যবস্থায় আঞ্চলিক বিশেষীকরণ গড়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের চা ও পাটজাত দ্রব্য, দক্ষিণ ভারতের কফি ও রবার, উত্তর ভারতের আখ প্রভৃতি উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার কল্যাণে সারা ভারতে সুলভে প্রেরণ করা যায়। ফলে যে অঞ্চলে যে সকল দ্রব্য উৎপাদনের সুযোগ বেশি সেই অঞ্চলে সেই দ্রব্যের উৎপাদন অধিক করা হয়। এইরূপ আঞ্চলিক বিশেষীকরণের ফলে উৎপাদনে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৪) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের প্রসার :
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের প্রসারের জন্য ভারতে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সড়কপথ, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ জলপথ, বিমানপথ প্রভৃতি মাধ্যমে এক স্থানের পণ্য সহজে অন্য স্থানে প্রেরণ করা যায়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে।
৫) প্রাকৃতিক বিপর্যয় :
বিশাল দেশ ভারতবর্ষের বন্যা, খরা, ঝড়ের তাণ্ডব, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় খাদ্য সরবরাহ ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা দূর করে অর্থনৈতিক উন্নতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
৬) দেশ প্রতিরক্ষায় :
দেশ প্রতিরক্ষায় উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব সর্বাধিক। ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় দেশ প্রতিরক্ষার কারণে সড়কপথ ও বিমানপথের উন্নতি ঘটেছে। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে 1961 সালে চিনের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতকে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল।
৭) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংহতিবোধ :
পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হলে দেশের প্রত্যেকটি স্কুলের মানুষের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আদান-প্রদান ও ভাব বিনিময় ঘটে। বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মের দেশ ভারতে এরূপ সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে জাতীয় সংহতিবোধ গড়ে ওঠে। জাতীয় সংহতিবোধ চেতনা থেকে আন্তর্জাতিক সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে।