জোয়ার ও ভাটা
জোয়ার ভাটা কাকে বলে ?
প্রতিদিন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সাগর-মহাসাগরের জল এক জায়গায় ফুলে ওঠে বা স্ফীত হয় এবং অন্য জায়গায় জল ধীরে ধীরে নিচে নেমে যায় বা অবনমিত হয়। জলের এই ফুলে ওঠাকে জোয়ার বলে এবং নিচে নেমে যাওয়াকে বলে ভাটা।
জোয়ার ভাটার কারণ ব্যাখ্যা করো |
প্রধানতঃ দু'টি কারণে জোয়ার-ভাঁটার সৃষ্টি হয়। এগুলি হ'ল— [১] চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব এবং [২] পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ বল ।
[১] চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষশক্তির প্রভাব :
মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি প্রতিটি জ্যোতিষ্ক পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই, এর প্রভাবে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু পৃথিবীর ওপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ সূর্যের ভর অপেক্ষা চাঁদের ভর অনেক কম (চাঁদ অপেক্ষা সূর্য প্রায় ২৬০ লক্ষ গুণ বড়) হলেও চাঁদ সূর্য অপেক্ষা পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থিত (পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কি.মি. ও পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি কি.মি.)। তাই, সমুদ্রের জল তরল বলে চাঁদের আকর্ষণেই প্রধানতঃ সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে ও জোয়ার হয়। সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়।
[২] জোয়ার ভাটা সৃষ্টিতে কেন্দ্রবহির্মুখী বলের প্রভাব উল্লেখ করো :
পৃথিবী নিজ মেরুরেখার চারদিকে অনবরত আবর্তন করে বলে কেন্দ্রবহির্মুখী বল বা বিকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রবহির্মুখী বলের প্রভাবে পৃথিবীর প্রতিটি অনুই মহাকর্ষশক্তির বিপরীত দিকে বিকর্ষিত হয় বা ছিটকে যায়। তাই, পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বা কেন্দ্রবহির্মুখী বলের প্রভাবে যেখানে মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তার বিপরীত দিকে সমুদ্রের জল বিক্ষিপ্ত হয়েও জোয়ারের সৃষ্টি করে।
জোয়ার-ভাঁটার সৃষ্টি
জোয়ার
মুখ্য জোয়ার – পৃথিবী ও চাঁদ আবর্তনের সময় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সম্মুখে আসে সেই অংশে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বা মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলে।
গৌণ জোয়ার—মুখ্য জোয়ারের বিপরীত প্রান্তে অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে প্রধানতঃ পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
চান্দ্র জোয়ার—চাঁদের আকর্ষণে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলে। এই জোয়ার অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রবল আকার ধারণ করে।
সৌর জোয়ার—সূর্যের আকর্ষণে যে জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে সৌর জোয়ার বলে।
ভাঁটা
ভাটা কি?
পৃথিবীর কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে মুখ্য জোয়ার হলে তার বিপরীত স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। এই সময় এই দুই স্থানের মধ্যবর্তী অংশে জলতল কিছুটা নিচে নেমে যায়। এই অবস্থাকে ভাঁটা বলা হয়। সাধারণতঃ মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের সমকোণ অঞ্চলে ভাঁটা হয়।
গৌণ জোয়ার হয় কেন ?
পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে আবর্তন করে। আবার চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করে। ফলে চাঁদ ও পৃথিবী উভয়েই একটি সাধারণ ভরকেন্দ্রের চারদিকে ঘুরছে। চাঁদ অপেক্ষা পৃথিবী বড় বলে এই ভরকেন্দ্রটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৯,৬০৯ কি.মি. অভ্যস্তরে অবস্থিত (পৃথিবীর গড় ব্যাস ১২,৭৩৫.৫ কি.মি. ও ব্যাসার্ধ ৬,৩৬৭.৫ কি.মি.)। তাই পৃথিবীর কেন্দ্র অপেক্ষা ঐ ভরকেন্দ্র চাঁদের অধিকতর নিকটবর্তী হওয়ায় (প্রায় ৪,৮০০ কি.মি.) চাদের আকর্ষণের দিকেই প্রধানতঃ মুখ্য জোয়ার হয়। এর বিপরীত দিকে চাঁদের আকর্ষণ বেশ কম অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের প্রভাব কম। এই স্থানে বিকর্ষণ শক্তি বা পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব বেশি। এরই প্রভাবে গৌণ জোয়ার হয়।
দিনে দুবার জোয়ার ভাটা হয় কেন ?
আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং তার বিপরীত প্রান্তে গৌণ জোয়ার হয়। এই দুই স্থানের সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলিতে ভাঁটা হয়। পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে স্থানে গৌণ জোয়ার হয় সেই স্থানটি ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট পরে চাঁদের সামনে আসে এবং সেখানে তখন হয় মুখ্য জোয়ার। অপরদিকে মুখ্য জোয়ারের স্থানটি তখন বিপরীত প্রান্তে চলে যায় বলে সেখানে হয় গৌণ জোয়ার। তাই পৃথিবীর একবার আবর্তনে (২৪ ঘন্টায়) পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রতিটি স্থান একবার চাঁদের সামনে আসে বলে প্রতিটি স্থানে দিনে দু'বার জোয়ার হয়—একবার মুখ্য জোয়ার ও একবার গৌণ জোয়ার। একইভাবে সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলিতে দু'বার ভাঁটা হয়।
• জোয়ার-ভাটার ব্যবধান •
পৃথিবীর কোন অংশেই প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার-ভাঁটা হয় না কেন?
২৪ ঘন্টায় পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে একবার আবর্তনের সময় পৃথিবীর প্রতিটি স্থান একবার চাঁদের সামনে আসে। এর ফলে ২৪ ঘন্টায় (প্রকৃতপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট) পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে দু'বার জোয়ার ও দু'বার ভাঁটা হয়। কিন্তু পৃথিবীর কোন অংশেই প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার- ভাঁটা হয় না। কারণ, পৃথিবী যেমন নিজের মেরুরেখার চারদিকে (৩৬০°) ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন করে, চাঁদও তেমনি ২৭ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসে।
সুতরাং ২৪ ঘণ্টায় চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের ৩৬০ ÷ ২৭ = ১৩° পথ অতিক্রম করে বা ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীর একবার আবর্তনে চাঁদ ১৩° পথ এগিয়ে যায়। এই ১৩° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ৫২ মিনিট [ ১° পথ অতিক্রম করতে ৪ মিনিট সময় লাগলে ১৩° পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে ১৩ x ৪ মিনিট = ৫২ মিনিট] :
অর্থাৎ, যে দ্রাঘিমা রেখাটি চাঁদের সামনে আছে, ২৪ ঘণ্টা পরে ৩৬০° অতিক্রম করে সেই দ্রাঘিমা রেখাটি তার পূর্ব অবস্থানে ফিরে আসার মধ্যে চাঁদ ১৩° পথ এগিয়ে যায়। ঐ দ্রাঘিমা রেখাটিকে পুনরায় চাঁদের সামনে আসার জন্য তাই আরও ১৩° বেশি আবর্তন করতে হয়। এর জন্য ঐ দ্রাঘিমারেখার অতিরিক্ত সময় লাগে ৫২ মিনিট। তাই, পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে প্রত্যেক মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের পরবর্তী মুখ্য বা গৌণ জোয়ার আরও ৫২ মিনিট পরে অনুষ্ঠিত হয় (অর্থাৎ মোট ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট পরে)।
জোয়ার-ভাঁটা প্রত্যেক দিন সমান প্রবল হয় না কেন? –
আমরা প্রতিদিন জোয়ারের সময় একইভাবে জলতল সমান হারে ফুলে উঠতে দেখি না বা ভাঁটার সময় জলতল সমান হারে নিচে নেমে যেতে দেখি না। এর কারণ চাঁদ ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থান। চাঁদ ও সূর্যের অবস্থানের ওপরেই মহাকর্ষ শক্তি ও কেন্দ্রাতিগ বলের তফাৎ ঘটে এবং জোয়ার-ভাঁটার পরিমাণের তারতম্য ঘটে।
ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল
পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে প্রবল জোয়ার ও প্রবল ভাঁটার সৃষ্টি হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী এই ধরনের অবস্থানকে বলা হয় সিজিগি। পৃথিবীর সঙ্গে চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণী বল বেশি হয় এবং এর প্রভাবে জোয়ার অভ্যন্ত প্রবল হয়। এরূপ প্রবল জোয়ারকে ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল বলে (তামিল শব্দ কাডাল= সমুদ্র)।
ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল প্রতি ১৫ দিন অন্তর ঘটে। পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করতে চাঁদের যে সময় লাগে (২৭ দিন), তাকে বলা হয় চান্দ্রমাস। এই চান্দ্রমাসের এক একটি দিনকে বলা হয় তিথি। তিথি অনুযায়ী নিজের কক্ষে চাঁদের স্থান পরিবর্তন ঘটে। ভরা জোয়ার বা তেজ কটালের ওপর চাঁদের এই স্থান পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
অমাবস্যা তিথিতে ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল:
অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে (সংযোগ অবস্থান)। এর ফলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ শক্তি পৃথিবীর একই স্থানে কার্যকরী হয় এবং সমুদ্রের জলরাশির অত্যধিক স্ফীতি ঘটে। এইজন্যে অমাবস্যা তিথিতে ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল হয়।
অমাবস্যা তিথিতে সূর্য ও চাঁদ, পৃথিবীর একদিকে একই সরলরেখায় থাকে বলে পৃথিবীর একই স্থানে মুখ্য চান্দ্র জোয়ার ও মুখ্য সৌর জোয়ার হয় এবং এর বিপরীত অবস্থানে একই দিকে গৌণ চান্দ্র জোয়ার ও গৌণ সৌর জোয়ার হয়। এইজন্য অমাবস্যার জোয়ার পূর্ণিমার জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল হয়।
পূর্ণিমা তিথি ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল :
পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে। চাঁদের সামনে অবস্থিত পৃথিবীর সমুদ্রের অংশ চাঁদের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে প্রবলভাবে স্ফীত হয় এবং সেখানে মুখ্য জোয়ারের সৃষ্টি হয়। ঐ একই স্থানে সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। আবার, সূর্যের সামনে অবস্থিত পৃথিবীর সমুদ্রের অংশ সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে প্রবলভাবে স্ফীত হয় এবং সেখানে মুখ্য জোয়ারের সৃষ্টি হয়। ঐ একই স্থানে চাঁদের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয়। এইরূপে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত প্রভাবে পূর্ণিমা তিথিতে ভরা জোয়ার বা তেজ কটাল হয়।
•মরা জোয়ার বা মরা কটাল •
কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে সরলরেখায় অবস্থান না করে পরস্পর সমকোণে (৯০°) অবস্থান করে। এই সময়ে পৃথিবীর যে স্থান চাঁদের কাছাকাছি থাকে সেই স্থানে চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার হয়। বিপরীত দিকে পৃথিবীর যে স্থান সূর্যের কাছে থাকে, সেই স্থানে সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার হয়। ফলে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পরের বিরোধী হওয়ায় জোয়ার তত প্রবল হয় না। এরূপ জোয়ারকে মরা জোয়ার বা মরা কটাল বলে।
অষ্টমী তিথিতে চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার—দু'টিই কম প্রবল হয়।
চাঁদের আকর্ষণ ক্ষমতা সুর্যের থেকে বেশি বলে (পৃথিবী চাঁদের অনেক নিকটে অবস্থিত বলে) চাঁদের আকর্ষণে যে জোয়ার হয় তাকে প্রত্যক্ষ জোয়ার এবং এর বিপরীত স্থানে সূর্যের আকর্ষণে যে জোয়ার হয় তাকে পরোক্ষ জোয়ার বলে।
বান ডাকা কি?
জোয়ারের সময়, বিশেষতঃ তেজ কটালের সময় বর্ষাকালে, সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে নদীর মোহনার মধ্য দিয়ে দ্রুত নদীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও প্রবল বেগে জোয়ারের জল উঁচু হয়ে উজানের দিকে এগিয়ে চলে। একে বানডাকা বলে।
a) বান ডাকার কারণ—
তিনটি কারণে প্রধানতঃ বর্ষাকালে নদীর মোহনার নিকট বান ডাকা দেখা যায়। এগুলি হ'ল—
[১] নদীর মোহনা ফানেল আকৃতির হলে অর্থাৎ নদীর মোহনা বেশ চওড়া ও নদীখাত অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ হলে,
[২] নদীর মোহনায় বালির চড়া থাকলে এবং
[৩] নদীতে প্রবল স্রোত থাকলে।
যে সব নদীর মধ্য দিয়ে বেশি জল প্রবাহিত হয় (তুষার-গলা জলে পুষ্ট নদী) সেই সব নদীতে সাধারণতঃ বানডাকা অবস্থা দেখা যায়। এই সময় নদীতে স্নান করা বা নৌকা চালনা বিপজ্জনক।
ভাগীরথী-হুগলী নদীতে বর্ষাকালে বান ডাকার সময় জোয়ারের জল ৫-৯ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয় এবং ভীষণ শব্দে জোয়ারের জল উজানের দিকে এগিয়ে যায়। একে ষাঁড়াষাঁড়ির বান বলে।
উদাহরণ—
ভাগীরথী-হুগলী নদী, ইংলণ্ডের টেমস নদী, চীনের ইয়াংসি নদী, সীন, আমাজন প্রভৃতি নদীর নিম্নাংশে যেরূপ প্রবল জোয়ার দেখা যায়, তেমনি প্রবল বান ডাকাও দেখা যায়।
জোয়ার ভাটার ফলাফল
[১] অগভীর নদীতে জোয়ারের সময় বড় বড় সামুদ্রিক জাহাজ সহজেই নদীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। ভাগীরথী-হুগলী নদীর মধ্যে দিয়ে বড় বড় জাহাজ কেবলমাত্র জোয়ারের সময়ই কলকাতা বন্দরে প্রবেশ করে এবং ডাটার টানে ফিরে যায়।
[২] জোয়ার-ভাটার প্রভাবে নদীর জল পরিষ্কার থাকে। ভাঁটার টানে বিভিন্ন নদী আবর্জনা সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। কলকাতা শহরের আবর্জনাও এইভাবে ভাঁটার টানে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
[৩] জোয়ার-ভাঁটার প্রভাবে নদীর মোহনাতে পলি সঞ্চিত হতে পারে না, নদীখাত গভীর থাকে।
[8] জোয়ারের ফলে নদীর জল বৃদ্ধি পায়। ফলে নৌ-চলাচলের সুবিধা হয়। সুন্দরবন অঞ্চলের ছোট ছোট খাঁড়িগুলি জোয়ারের সময়ই নৌবহনযোগ্য।
[৫] শীত প্রধান অঞ্চলে নদীর জল জোয়ার-ভাটার প্রভাবে লবণাক্ত হলে নদীর জল অতিরিক্ত ঠাণ্ডাতেও সহজে বরফে পরিণত হয় না। ফলে বন্দরগুলি বরফমুক্ত থাকে।
[৬] যে সব উপকূল অঞ্চলে বা নদী মোহনায় (যেমন সুন্দরবন খাঁড়ি অঞ্চলে) জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়, সেই সব অঞ্চলে জোয়ারের তীব্র স্রোত থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তামিলনাডুর উপকূল অঞ্চলে এইভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
[৭] জোয়ারের টানে বহু সামুদ্রিক মাছ নদীতে প্রবেশ করে ও ভাঁটার টানে তা ফিরে যায়। তাই জোয়ার-ভাঁটার সঙ্গে জেলেদের জীবনযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
[৮] অনেক সময় নদীর স্রোত কম থাকলে জোয়ার-ভাটার প্রভাবে নদীগর্ভে পলি সঞ্চিত হয়। ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। হুগলী নদীর গভীরতা হ্রাসের এটি অন্যতম কারণ।
[৯] জোয়ারের প্রভাবে নদীর জল লবণাক্ত হয়ে যায়। এর ফলে নদীর জল সেচ, শিল্প ও পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
[১০] প্রবল জোয়ারে যে বানের সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে উপকূলের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে এবং নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।