বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?
বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের রেগুলেশন অ্যাক্ট প্রবর্তন করে ব্রিটিশ শাসক বাংলার জমিদারদের অধিকৃত জমি পুনঃগ্রহণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরী, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে ওঠে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, যেখানে সভাপতিত্ব করেন গৌরীশংকর তর্কবাগীশ এবং সম্পাদক হয়েছিলেন পণ্ডিত দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন ।
এই সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীর মঙ্গল - অমঙ্গলকারী বিষয়গুলির আলোচনা ও পর্যালোচনা করা, যেমন—কোম্পানী কর্তৃক নিষ্করভূমির ওপর কর নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে জনগণের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে সরকারের ত্রুটিগুলি সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়।
বেন্টিঙ্কের পাশ্চাত্য ভাষানীতির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য প্রসারের জন্য এই সভার উদ্ভব হলেও সভার আলোচনা ও বিতর্কে স্বদেশ ভাবনা বা রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা এই সভায় নিষিদ্ধ ছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর' - এ লিখেছিলেন – 'রাজকীয় বিষয়ের বিবেচনার জন্য অপর যে সভা হইয়াছিল, তন্মধ্যে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে প্রথমা বলিতে হইবেক এবং গবেষক যোগেশচন্দ্র বাগল এটিকে 'বাঙালি তথা ভারতবাসীদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান' বলেছেন। এটি বেশিদিন স্থায়ী না হলেও ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সংগঠন 'জমিদার সভা'- র অগ্রদূত ছিল। তাই বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভাকে ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানরূপে চিহ্নিত করা হয়।