টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বা ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র // Topographical Map

 টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বা ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র

টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বা ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র কাকে বলে? 

    ভূ-পৃষ্ঠের বা পৃথিবী পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ( ভূপ্রকৃতি, নদনদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি ) এবং সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে (রাস্তাঘাট, বাড়ি, রেললাইন, পাওয়ার লাইন প্রভৃতি) রেখা, রং ও বিভিন্ন প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় যে চিত্রের মাধ্যমে তাকে টোপোগ্রাফিক্যাল বা ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র টোপোশিট নামেও পরিচিত।

ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য:


(i) এই মানচিত্র একটি নির্দিষ্ট স্কেলে আঁকা হয়।

(ii) টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বৃহৎ স্কেলের হয়।

(iii) প্রতিটি টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রে অক্ষাংশগত এবং দ্রাঘিমাংশগত বিস্তার সুনির্দিষ্ট থাকে।

(iv) প্রতিটি মানচিত্রের ডান দিকের উপরিভাগে এক সুনির্দিষ্ট নাম্বার থাকে।

(v) জরিপ কার্যের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করা হয়। বর্তমানে উপগ্রহ চিত্র বা বিমান চিত্রের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে।

(vi) প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক উপাদান গুলি বিভিন্ন প্রতীক ও চিহ্নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।


ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে বিভিন্ন ধরনের স্কেলের ব্যবহার:

          ভারতের উপমহাদেশের মানচিত্র প্রস্তুত করতে ভারতের সর্বক্ষণ বিভাগ (Survey of India) 4° উত্তর থেকে 40° উত্তর অক্ষরেখা এবং 44° পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে 104° পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে 4° × 4° গ্রিডে মোট 135 টি বিভাগে বিভক্ত করেছে। এই সকল গ্রিডগুলির মধ্যে যেগুলি সম্পূর্ণরূপে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত সেগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদবাকি গ্রিডগুলিকে 1 থেকে 106 পর্যন্ত সূচক নাম্বার বা ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়েছে। 4° × 4° গ্রিডগুলিকে প্রয়োজন অনুযায়ী 1° × 1° বা আরো ছোট অংশে বিভক্ত করে ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

          দীর্ঘদিন ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ (Survey of India) ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র প্রস্তুত করতে মানচিত্রের স্কেলে ব্রিটিশ পদ্ধতির প্রয়োগ করত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে 1957 সাল থেকে ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ(Survey of India) ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্রের স্কেলে মেট্রিক পদ্ধতির প্রয়োগ করছে।

          বর্তমানে ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ ভিন্ন স্কেলে যে সকল ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র প্রস্তুত করছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো,-

(i) মিলিয়ন শিট:

         বিস্তার বা বিস্তৃতি: 4° × 4°ব্যবধানে অর্থাৎ 16 ডিগ্রি পরিসরের স্থান মিলিয়ন শিটের অন্তর্গত।

        মেট্রিক স্কেল: 1 ইঞ্চিতে 16 মাইল বা 1 সেমিতে 10 কিলোমিটার।

        R.F. 1:1000000 

        সূচক সংখ্যা: 62, 67


(ii) ডিগ্রি শিট:

         বিস্তার বা বিস্তৃতি: 1° × 1°ব্যবধানে অর্থাৎ 1° ডিগ্রি পরিসরের স্থান ডিগ্রি শিটের অন্তর্গত।

        মেট্রিক স্কেল: 1 ইঞ্চিতে 4 মাইল বা 1 সেমিতে 2.5 কিলোমিটার।

        R.F. 1:250000

        সূচক সংখ্যা: 62A, 67B


(iii)1/2" ইঞ্চি শিট

         বিস্তার বা বিস্তৃতি: 30'×30' ব্যবধানে প্রস্তুত করা হয়।

        মেট্রিক স্কেল: 1 ইঞ্চিতে 2 মাইল বা 1 সেমিতে 1 কিলোমিটার।

        R.F. 1:100000

        সূচক সংখ্যা: 62 P/NE , 67 P/NW


(iv) ইঞ্চি শিট

        বিস্তার বা বিস্তৃতি: 15'×15' ব্যবধানে প্রস্তুত করা হয়।

        মেট্রিক স্কেল: 1 ইঞ্চিতে 1 মাইল বা 1 সেমিতে 1/2 কিলোমিটার বা 500 মিটার।

        R.F. 1:50000

        সূচক সংখ্যা: 62 J/10, 67 C/12


(v) নতুন সিরিজ শিট:

        বিস্তার বা বিস্তৃতি: 7'30"×7'30" ব্যবধানে প্রস্তুত করা হয়।

        মেট্রিক স্কেল: 1 সেমিতে 250 মিটার।

        R.F. 1:25000

        সূচক সংখ্যা: 62 P/1/NE


ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্রের গুরুত্ব:


     (i) কোন অঞ্চলের প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক উপাদানগুলি সম্পর্কে জানা যায়।

     (ii) টপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র এবং উপগ্রহ চিত্রের তুলনা করে বর্তমান কোন স্থানের পরিবর্তন জানা সম্ভব হয়।

    (iii) সামরিক প্রয়োজনে ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপের গুরুত্ব আছে।

    (iv) কোন অঞ্চলের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তব রূপায়ণের জন্য ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

     (v) সম্পদ বিশেষত অরণ্য সংরক্ষণের জন্য এই মানচিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


বৃহৎ , মাঝারি এবং ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র


ক) বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র

             ভারতের সর্বক্ষণ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত 1:50000 এবং 1:25000 স্কেলের ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র হল বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র। যেমন- 62 J/10, 67 C/12, 62 P/1/NE

খ) মাঝারি স্কেলের মানচিত্র 

            ভারতের সর্বক্ষণ বিভাগ দ্বারা প্রকাশিত উপরের স্কেলের মানচিত্র ব্যতীত অন্য মানচিত্রগুলি মাঝারি স্কেলের মানচিত্র। যেমন- 62, 67, 62A, 67B

গ) ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র: 

           ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র ক্ষুদ্র স্কেলের হয় না।


উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রের পার্থক্য।


ভিত্তি ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র উপগ্রহ চিত্র
1. মানচিত্রের প্রকৃতি নির্দিষ্ট অঞ্চলে জরিপ কার্যের মাধ্যমে তথ্য মানচিত্রে চিত্রায়িত হয়। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সেন্সর বা ক্যামেরার সাহায্যে তথ্য সংগৃহীত হয়।
2. তথ্যের গুণমান মানচিত্রের তথ্য সর্বদা নিখুঁত হয় না। তথ্য একেবারে নিখুঁত।
3. তথ্যের প্রকৃতি ভূ-প্রকৃতি, নদনদী ও জলাশয়, উদ্ভিদ, জনবসতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি ভৌগোলিক বিষয়গুলি মানচিত্রে রং, রেখা ও প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে চিত্রায়িত থাকে। ভূপৃষ্ঠের সকল তথ্যই উপগ্রহ চিত্রে রক্ষিত থাকে। এই চিত্রে বিষয় সমূহ বিভিন্ন রঙে বা ছদ্ম রঙে উপস্থাপিত হয়।
4. তথ্যের বয়স ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের তথ্য অনেক পুরানো। উপগ্রহ চিত্রের তথ্য অনেক টাটকা।
5. তথ্যের তুলনা তথ্য পুরনো বলে দৈনিক রাশিতথ্যের তুলনা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। টাটকা তথ্য এবং সর্বদা পরিবর্তিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় বলে তুলনায় কাজ সহজ হয়।
6. তথ্যের ধরন তথ্য ডিজিটাল নয় বলে কম্পিউটারে সরাসরি ব্যবহার সম্ভয় নয়। তথ্য ডিজিটাল হওয়ায় কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়।
7. ব্যবহার কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহার অত্যন্ত বহুমুখী ৷
৪. দক্ষতা এই মানচিত্র বিশ্লেষণে জ্ঞান দক্ষতার প্রয়োজন তুলনামূলক কম। বিশ্লেষণকারীর জ্ঞান, দক্ষতার উপর নির্ভুল তথ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url