জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা

 জাতীয়তাবাদ প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা বিশ্লেষণ কর। 

      ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল তার বেশিরভাগই ছিল ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে তৈরি। এই প্রেক্ষাপটে রাজনারায়ন বসু উপলব্ধি করেন জাতীয় গৌরবগাথার উন্মেষ ছাড়া জাতির মহত্বলাভ সম্ভব নয়। রাজনারায়ন বসুর প্রেরণা ও ভাবধারায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রীঃ কলকাতায় হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

       হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশনেই সম্পাদক জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন – আমাদের এই মিলন সাধারণ ধর্ম-কর্মের জন্য নয়, কোনো বিশেষ সুখের জন্য নয়, কোনো আমোদ-প্রমোদের জন্য নয় – এটি স্বদেশের জন্য, ভারতের জন্য। - হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবের কথা ছড়িয়ে দেওয়া। দেশীয় ভাষা চর্চা করা, জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া প্রভৃতি। প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্য তুলে ধরে নবগোপাল মিত্র এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিরোধের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে যুবকদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি ও শৃংখলাবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারে।

       সাধারণ মানুষকে তাদের অতীত-ঐতিহ্য সম্বন্ধে অবহিত করা হয়। কবি, সাহিত্যক, চিন্তাবিদ, শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করা হয়। শিল্পী, লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই মেলায় সদস্যদের ইংরেজিতে কথাবর্তা বলা বারণ ছিল। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ এবং মনোমোহন বসু দেশাত্ববোধক গান রচনা করেছিলেন। এই মেলা 'ন্যাশনাল পেপার' নামক পত্রিকা প্রকাশ করে, যার লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা। এ ছাড়াও মেলার উদ্যোগে জাতীয় বিদ্যালয়, জিমনাসিয়াম এবং গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url