পূর্ব-ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্প-কেন্দ্রীভবনের কারণ ।। পূর্ব ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের একাদেশীভবনের কারণ।
পূর্ব-ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্প-কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
ভারতে বর্তমানে যে আটটি বৃহদায়তন লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানা দেখা যায় তা মূলত: পূর্ব ভারতে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে অবস্থিত। পূর্ব ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের একদেশী ভবনের কারণগুলি হল-
i) কাঁচামালের যোগান :
লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রধান কাঁচামাল হল আকরিক লোহা। পূর্ব ভারতে দূর্গাপুর, জামশেদপুর, বোকারো প্রভৃতি যে লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলি আছে সেগুলির প্রয়োজনীয় আকরিক লোহা সিংভূম, ময়ূরভঞ্জ, দাল্লিরাজহারা প্রভৃতি খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়।
অন্যান্য কাঁচামালের মধ্যে উড়িষ্যার বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর, গাঙপুর ও সুন্দরগড় থেকে ডলোমাইট, কোরাপুট, কালাহান্ডি থেকে ম্যাঙ্গানীজ পাওয়া যায়।
শিল্পের প্রয়োজনীয় কয়লা ঝরিয়া, বোকারো, রাণীগঞ্জ প্রভৃতি খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়। পূর্ব ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলি ছোটনাগপুর মালভূমি ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় খনিজের যোগান সহজে পাওয়া সম্ভব হয়।
ii) জল :
লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জল দামোদর, বরাকর, সুবর্ণরেখা, খরকাই প্রভৃতি নদী থেকে পাওয়া যায়।
iii) প্রাকৃতিক অবস্থান :
মালভূমির প্রান্তদেশীয় অঞ্চলে দুর্গাপুর, জামশেদপুর, বোকারো প্রভৃতি লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলি অবস্থিত হওয়ায় বন্ধুর ভূপ্রকৃতির পরিবর্তে প্রায় সমতল জমিতে কারখানা গড়ে তোলা সহজ হয়েছে। এই অঞ্চলের জলবায়ু মৌসুমী প্রকৃতির, ফলে তা শ্রম শিল্পটি গড়ে তোলার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।
iv) পরিবহণ :
খনি থেকে কাঁচামাল শিল্প কারখানায় নিয়ে আসা এবং কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্যকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে এখানে NH2, NH118, NH 18 প্রভৃতি জাতীয় সড়কপথ, বিভিন্ন রাজ্য সড়কপথ, দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব রেলপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
v) বন্দর :
লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের কিছু অংশ বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর সাথে উৎপাদিত পণ্যকেও বিদেশের বাজারে রপ্তানি করা হয়। এই আমদানি রপ্তানির প্রয়োজনে কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর, পারাদ্বীপ, বিশাখাপত্তনম সমুদ্রবন্দর, কলকাতা, হলদিয়া নদী বন্দর বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
vi) শ্রমিক :
ভারত জনবহুল দেশ। লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্য থেকে সুলভে পাওয়া সম্ভব হয়।
vii) মূলধন :
বৃহদায়তন শিল্প হিসাবে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে, বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং সরকারি সাহায্যে বিভিন্ন লৌহ ইস্পাত শিল্প কারখানাগুলি গড়ে উঠেছে।