শ্রীরামকৃষ্ণের 'সর্বধর্ম সমন্বয়'-এর আদর্শ ব্যাখ্যা কর।
শ্রীরামকৃষ্ণের 'সর্বধর্ম সমন্বয়'-এর আদর্শ ব্যাখ্যা কর।
উনিশ শতকে হিন্দু ধর্ম যখন একদিকে খ্রিস্টধর্ম ও ব্রাহ্ম ধর্মের ষাঁড়াশি আক্রমণ ও অন্যদিকে জাতপাত ও আচার সর্বস্বতায় জর্জরিত সেই সময়ে সহজিয়া আধ্যাত্মিকতা এবং সর্বধর্ম সমন্বয়-এর আদর্শকে তুলে ধরেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিনী কালী মন্দিরের পুরোহিত, তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও পাশ্চাত্য আদবকায়দা বর্জিত ও নিতান্ত গ্রাম্য এই সাধক ভারতীয় সনাতনী ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতির নির্যাসকে উপলব্ধী করেছিলেন অন্তরের ভক্তি দিয়ে।
বৈষ্ণব, শাক্ত, তন্ত্র সাধন মার্গ-এর সঙ্গে ইসলাম, খ্রিস্ট, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাদর্শের অনুসন্ধানের পর তিনি উপলব্ধি করেন “যত মত তত পথ” সব ধর্ম সত্য। রাম ও রহিম একই সত্ত্বা। যত্র জীব তত্র শিব। মানুষ অনন্ত শক্তির আধার, জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস করতেন ঈশ্বর লাভের জন্য কর্মত্যাগের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নিষ্কাম কর্মের। সত্য, সহিষ্ণুতা এবং সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানো যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণের সহজ ও লৌকিক আধ্যাত্মবাদ এবং সর্বধর্ম সমন্বয় হিন্দুধর্মকে গ্রামের চালাঘার থেকে জমিদারের দালান এবং কলকাতার চাকরিজীবী বাবুদের বৈঠকখানায় সমাদৃত করে তোলেন। ফলে হিন্দুধর্ম নবচেতনায় বলীয়ান হয়ে ওঠে। রামকৃষ্ণের বিমূর্ত সর্বধর্ম সমন্বয় ও মানবতাবাদকে মূর্ত করে তুলেছিলেন তাঁর ভাবশিষ্য বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।