ভারতের ভূপ্রকৃতি // Topography of India
1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
ক) কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী
- হিমাদ্রি হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত। হিমালয় পর্বত সৃষ্টির সময়ে টেথিস সাগরের পলি সঞ্চিত হয়ে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে।
- কারাকোরাম পর্বতকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় কৃষ্ণগিরি।
- এর দৈর্ঘ্য 800 কিলোমিটার। পামির মালভূমি ও সিন্ধু নদের মধ্যে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী অবস্থান করে।
- কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীর শৃঙ্গগুলি সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে বলে একে বসুধার ধবলশীর্ষ বলে।
- পর্বতশৃঙ্গ গডউইন অস্টিন বা K2 (উচ্চতা 8611 মিটার) ভারতের উচ্চতম শৃঙ্গ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গ গুলি হল - হিডেন পিক, ব্রড পিক, গ্যাসের বুম।
- হিমবাহ-- সিয়াচেন, বালটারো (60 কিলোমিটার), রিমো হিমবাহ, বিয়াফো (60 কিমি), হিসপার (62কিমি)। সিয়াচেন ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ এর দৈর্ঘ্য 76 কিলোমিটার।
- ভারতচীন সীমান্তে-- তাগিল পর্বত (5575 কিমি)। এখানে পৃথিবীর উচ্চতম কারাকোরাম গিরিপথ অবস্থিত।
- তাগিল পর্বতের উত্তরে রয়েছে আকসাই চীন।
খ) লাদাখ পর্বতশ্রেণী
- প্রধান হিমালয় ও কারাকোরামের মধ্যবর্তী অঞ্চলে লাদাখ পর্বতশ্রেণী অবস্থিত।
- এর দৈর্ঘ্য 350 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 50 কিলোমিটার।
- লাদাখ পর্বতশ্রেণী সিন্ধু নদ ও শিয়ক নদীর মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত।
- টেথিস সাগরের সঞ্চিত পলি থেকে এর উৎপত্তি।
- গড় উচ্চতা 5300 মিটার।
- হ্রদ--- প্যাংগং এটি লবণাক্ত হ্রদ এবং ভারতের উচ্চতম হ্রদ।
- গিরিপথ: খারদুংলা (এখানে পৃথিবীর উচ্চতম সড়ক সেতু রয়েছে )।
গ) হিমালয় পর্বতশ্রেণী
- একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণী।
- পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত (8126 মি) থেকে পূর্বে নামচাবারোয়া (7758 মি, অরুণাচল প্রদেশ) পর্যন্ত বিস্তৃত।
- হিমালয় পর্বতের দৈর্ঘ্য 2500 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 150 থেকে 400 কিলোমিটার।
- ভারতে ক্ষেত্রফল 5 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
- পামির গ্রন্থি থেকে এই পর্বত নির্গত হয়েছে।
হিমালয় পর্বতশ্রেণী চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণী নিয়ে গঠিত। যেমন,-
১. টেথিস হিমালয়
- হিমালয়ের একেবারে উত্তর অংশ টেথিস বা তিব্বত বা ট্রান্স হিমালয় নামে পরিচিত।
- এর দৈর্ঘ্য 1000 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 40 থেকে 225 কিলোমিটার।
- বাংলায় একে হিমালয়ত্তর অঞ্চল বলে।
- টেথিস হিমালয়ের গড় উচ্চতা 3000 মিটার।
- টেথিস হিমালয় ভারতে জম্মু কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
- জাসকর পর্বতশ্রেণী এই অংশ দিয়ে বিস্তৃত।
- এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লিওপারগেল (7420 মিটার)।
২. হিমাদ্রি হিমালয় বা বৃহৎ হিমালয়
- টেথিস হিমালয়ের দক্ষিনে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য 2500 কিলোমিটার। প্রস্থ 120 কিমি থেকে 190 কিলোমিটার।
- পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতশ্রেণী। গড় উচ্চতা 6000 মিটার।
- অতি প্রাচীন পাললিক ও রূপান্তরিত শিলা এবং তার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত।
- শৃঙ্গ---- মাউন্ট এভারেস্ট (8848 মিটার, পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মিটার, পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ) নাঙ্গা পর্বত, ধবলগিরি, মাকালু, গৌরীশঙ্কর, নন্দাদেবী, কামেট, বদ্রিনাথ।
- গিরিপথ--- নাথুলা, জোজিলা, সিপকিলা, জেলেপলা, বুরজিলা ।
- মাউন্ট এভারেস্টকে নেপালিরা সাগরমথা, তিব্বতিরা চোমোলুংমা বলে।
৩. হিমাচল হিমালয় বা মধ্য হিমালয় বা অবহিমালয়
- হিমাদ্রির দক্ষিণে অবস্থিত
- 2000 থেকে 3300 মিটার গড় উচ্চতা। মতান্তরে 2000 থেকে 5000 মিটার।
- 30 থেকে 80 কিলোমিটার প্রশস্ত।
- প্রধান পর্বতশ্রেণী: পিরপাঞ্জাল (এখানকার বৃহত্তম পর্বতশ্রেণী), ধওলাধর, নাগট্টিব্বা, মুসৌরি, মহাভারত লেখ, দার্জিলিং প্রভৃতি।
- গিরিপথ--- পিরপাঞ্জাল, বুন্দিলগির, বানিহাল।
- এশিয়ার দীর্ঘতম সুরঙ্গ জওহর টানেল।
৪. শিবালিক হিমালয়
- নবীন কালে সৃষ্ট। গড় উচ্চতা 600 থেকে 1200 মিটার এবং প্রস্থ 10 থেকে 50 কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য 2400 কিলোমিটার।
- শিবালিক পর্বত জম্মুতে জম্মু পাহাড়, অরুণাচল প্রদেশের ডাফলা, মিরি, আবর, মিশমি এবং উত্তরাঞ্চলের ধ্যাং নামে পরিচিত।
কাশ্মীর উপত্যকা
- 150 কিলোমিটার দীর্ঘ, 80 কিলোমিটার প্রস্থ এবং 4865 বর্গকিলোমিটার আয়তন।
- এখানে ডাল হ্রদ, উলার হ্রদ (ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ) রয়েছে।
- কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলে।
- কাশ্মীর উপত্যকায় নদী ও হিমবাহ সঞ্চিত পলিমাটিকে করেওয়া (Karewa) বলে।
- করেওয়ার মধ্য দিয়ে ঝিলাম নদী বা বিতস্তা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
- পীরপাঞ্জাল ও হিমাদ্রির মধ্যস্থলে কাশ্মীর উপত্যকা অবস্থিত।
দুন উপত্যকা
- মধ্য হিমালয় ও শিবালিক পর্বতের মধ্যে অবস্থিত। এই উপত্যকা স্থানীয় ভাষায় দুন নামে পরিচিত।
- দেরাদুন ভারতের বৃহত্তম দুন উপত্যকা। এর দৈর্ঘ্য 75 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 15 থেকে 20 কিলোমিটার।
হিমালয়ের হ্রদ
- কাশ্মীর উপত্যকা- ডাল, উলার।
- কুমায়ুন অঞ্চল- নৈনিতাল, সাততাল, ভিমতাল। ভুঞ্জর উপত্যকা- হেমকুন্ড।
- কেদারনাথ- চোরাবালি তাল, বাসুকি তাল।
হিমালয়ের প্রস্রবণ
- উষ্ণ প্রস্রবণ- কাশ্মীরের ভেরনাগ (ঝিলম নদীর উৎসস্থল), অনন্তনাগ, তপ্তপানি ( সিমলার কাছে)।
- শীতল প্রস্রবণ- দেরাদুনের সহস্রধারা।
হিমালয়ের হিমবাহ
- গাড়োয়াল অঞ্চলের গঙ্গোত্রী হিমবাহ (গঙ্গার উৎপত্তিস্থল)
- যমুনোত্রী হিমবাহ (যমুনার উৎপত্তিস্থল)
- জেমু হিমবাহ (তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল)
হিমালয় গিরিপথ
- জম্মু-কাশ্মীর- বানিহাল গিরিপথ ( জহর সুরঙ্গ), জোজিলা, পিরপাঞ্জাল।
- হিমাচল প্রদেশ- রোটাং পাস, বরলা চালা, সিপ কিলা।
- কুমায়ুন হিমালয়- লিপুলেখ, থাগলা ।
- সিকিম- নাথুলা, জেলেপলা।
2. উত্তরের সমভূমি অঞ্চল
- পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্য নিয়ে গঠিত।
- এর দৈর্ঘ্য 2500 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 250 থেকে 350 কিলোমিটার।
- আয়তন প্রায় 6.52 লক্ষ বর্গকিলোমিটার যা ভারতের মোট আয়তনের এক পঞ্চমাংশ।
সমভূমি অঞ্চল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন-
ক) রাজস্থান সমভূমি
- আরাবল্লী ও পশ্চিমে সিন্ধু-শতদ্রু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত।
- আয়তন 1.75 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। অধিকাংশ স্থানের উচ্চতা 150 মিটারের বেশি। এই সমভূমি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন-
১. বাগার অঞ্চল
- মরু অঞ্চলের পূর্ব দিকে এবং আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
- এটি বালুকাময় অংশ। একে অর্ধমরু অঞ্চলও বলে।
- বাগার অঞ্চল ঘাসে ঢাকা। কোথাও কোথাও কৃষিকাজ হয়।
২. রোহি অঞ্চল
- বাগার অঞ্চলের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।
- আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিমের ছোট ছোট নদীবাহিত পলি দ্বারা রোহি অঞ্চল গঠিত হয়েছে।
- এটি সংকীর্ণ প্লাবন সমভূমি এবং উর্বর।
৩. ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল
- রোহি অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত।
- প্রকৃত মরুভূমির শুরু।
৪. হামাদা
- ক্ষুদ্র মরু অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত।
- বালিরাশি ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা দ্বারা গঠিত।
৫. মরুস্থলি
- হামাদার পশ্চিমে অবস্থিত প্রকৃত মরুভূমি।
- পশ্চিমাংশ থর নামে পরিচিত।
- চলন্ত বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলে।
- লবণাক্ত জলের হ্রদ- সম্বর, দিদওয়ানা, কুচমান।
খ) পাঞ্জাব সমভূমি
- পূর্বে যমুনা নদী থেকে পশ্চিমে পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।
- প্রধানত শতদ্রু ও ইরাবতী নদীর পলি দ্বারা গঠিত।
- পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, দিল্লীতে দেখা যায়।
- এর আয়তন 95714 বর্গ কিলোমিটার এবং উচ্চতা 200-240 মিটার।
- নদীগুলির মধ্যবর্তী অংশকে দোয়াব বলে।
- পাঞ্জাব সমভূমির উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ খোস বা চোস নামে পরিচিত।
- প্লাবনভূমিকে স্থানীয় ভাষায় ধায়া বলে।
- ছোট ছোট বালিয়াড়িকে ভুর বলে।
বিভিন্ন দোয়াব
- বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার মাঝে চাজ দোয়াব।
- চন্দ্রভাগা এবং ইরাবতীর মাঝে রেচনা দোয়াব।
- ইরাবতী এবং বিপাশার মাঝে বারি দোয়াব।
- বিপাশা এবং শতদ্রুর মাঝে বিস্ত-জলন্ধর দোয়াব।
গ) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি
- অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপনদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে গঠিত হয়।
- এই সমভূমির আয়তন 56500 বর্গ কিলোমিটার এবং উচ্চতা 50 থেকে 110 মিটার।
- ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর অবস্থিত মাজুলী দ্বীপ ভারতের বৃহত্তম দ্বীপ।
ঘ) গাঙ্গেয় সমভূমি
- উত্তর প্রদেশ বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে এই সমভূমি বিস্তৃত।
- আয়তন 6.52 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
- এই সমভূমিতে নদী দ্বারা সৃষ্ট জলাভূমিকে কৌর বা তাল বা দহ বা বিল বলে।
- হিমালয়ের পাদদেশে পলি সঞ্চিত ঈষৎ ঢেউ খেলানো ভূমিকে ভাবর বলে।
- পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে হিমালয়ের পাদদেশে ভাবর জাতীয় ভূমিরূপকে ডুয়ার্স বলে।
- ভাবর অঞ্চলের দক্ষিনে সেতসেতে জলাভূমিকে তরাই বলে।
- খাদার ও বেট- গাঙ্গেয় সমভূমির নবীন পলিযুক্ত অঞ্চলকে পাঞ্জাবে বেট এবং উত্তরপ্রদেশে খাদার বলে।
- প্রাচীন পলিযুক্ত অঞ্চলকে ভাঙ্গড় বা বাঁগর বলে।
- সমভূমির পশ্চিমে ছোট ছোট বালিয়াড়িকে ভুর বলে।
- মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমির জলাশয়কে তাল বা কাউর বলে।
- নদী মধ্যবর্তী বালুচরকে দিয়ারাভূমি বলে।
- গাঙ্গেয় প্রাচীন বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চলকে বারিন্দ সমভূমি বলে।
- গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজের জন্য সৃষ্ট লবণাক্ত মৃত্তিকাকে রেহ, ঊষর বা কালার বলে।
- চুন জাতীয় মাটির নুড়িকে বলে কংকর বা ছোট ঘুটিং।
- উচ্চগঙ্গা সমভূমি- যমুনার থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 100 থেকে 300 মিটার।
- মধ্যগঙ্গা সমভূমি- এলাহাবাদ থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 30 থেকে 100 মিটার।
- নিম্নগঙ্গা সমভূমি- রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর। গড় উচ্চতা 30 মিটারের কম।
3. দাক্ষিণাত্যের মালভূমি
মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এই রাজ্যের অংশ নিয়ে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি গঠিত হয়েছে।
A. পর্বতসমূহ
ক) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা
- অপর নাম সহ্যাদ্রি পর্বত।
- এর দৈর্ঘ্য 1600 কিলোমিটার।
- পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গা ভাবুলমালা (2300 মিটার)।
- অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ- অগ্রস্থকুটম (2044মিটার), কলসুবাই, মহাবালেশ্বর, হরিশ্চন্দ্রগর।
- নাসিকের কাছে থলঘাট এবং পুনের কাছে ভোরঘাট প্রধান গিরিপথ।
- পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বে ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত অংশে সিঁড়ির মত ধাপ দেখা যায় একে ডেকানট্র্যাপ বলে।
- পশ্চিমঘাট পর্বতের দক্ষিণতম শৃঙ্গ হল অগস্তুকটম।
খ) পূর্বঘাট পর্বতমালা
- অপর নাম মলয়াদ্রি।
- দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বিলিগির রঙ্গন (1750 মিটার) পূর্বঘাট পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
- অন্যান্য শৃঙ্গ--- জিন্দাগারা(1690 মিটার), নান্নামালাই, ভেলিকোন্ডা, পলকুন্ডা, সেবরয়, পচামালাই, জাভাদি, আরমাকুণ্ড, মহেন্দ্রগিরি (1490 মিটার)।
গ) দক্ষিণের পর্বত
- পূর্বঘাট ও পশ্চিমঘাট নীলগিরি পর্বত গ্রন্থিতে মিলিত হয়েছে।
- নীলগিরি পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গ দোদাবেতা (2637 মিটার)।
- নীলগিরির দক্ষিণে আনাইমালাই, মাকুতি, পালনি ও কার্ডামাম পর্বত অবস্থিত।
- আনাই মালাই পর্বতের আনাইমুদি (2695 মিটার) সমগ্র দক্ষিণ ভারতের উচ্চতম শৃঙ্গ।
- নীলগিরির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশকে কুন্ডা বলে।
ঘ) সাতপুরা পর্বত
- দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তরসীমায় অবস্থিত সাতপুরা পর্বত একটি স্তূপ পর্বত।
- পশ্চিম সাতপুরার অপর নাম রাজপিপলা পাহাড়।
- পূর্ব সাতপুরা মহাকাল উচ্চভূমি নামে পরিচিত।
- সাতপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধূপগড় (1350 মিটার)। অন্যান্য শৃঙ্গ হল অমরকন্টক।
ঙ) মহাদেব ও মহাকাল পর্বত এবং অজন্তা পাহাড়
- সাতপুরার পূর্বে রয়েছে মহাদেব পর্বত। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পাঁচমারি(1050 মিটার)।
- মহাদেবের পূর্বে রয়েছে মহাকাল পর্বত। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক (1057 মিটার)।
B. মালভূমি সমূহ
ক) কর্ণাটক মালভূমি
- মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিনে অবস্থিত।
- অপেক্ষাকৃত কম উচ্চ মালভূমি উত্তর ও পূর্ব অংশকে বলে ময়দান।
- অধিক উচু দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশকে বলে মালনাদ (কন্নড়, মাল= পাহাড় এবং নাদ= দেশ)।
- মালনাদ অংশে বাবাবুদান পাহাড় অবস্থিত। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মুলানগিরি (1923 মিটার)।
খ) মহারাষ্ট্র মালভূমি
- ব্যাসাল্ট লাভা গঠিত, চ্যাপ্টা মাথা বিশিষ্ট মালভূমি।
- সিঁড়ির ন্যায় ধাপ দেখা যায়। একে ডেকানট্রাপ বলে।
- অজন্তা, ইলোরা, বালাঘাট, হরিশচন্দ্র প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায়।
- 7 থেকে 13 কোটি বছর আগে বিদার অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
- Trap সুইডিস শব্দ যার অর্থ ধাপ বা সিঁড়ি।
গ) তেলেঙ্গানা মালভূমি
- তেলেঙ্গানায় অবস্থিত।
- পূর্বদিকে ঢালু।
- গোলাকার পাহাড় ও ঢেউ খেলানোর সমভূমি দেখা যায়।
- নিস শিলাদ্বারা গঠিত।
- এর উত্তর দিকে সাতমালা পাহাড় অবস্থিত।
- ডেকান ট্রাপ-- 6 থেকে 7 কোটি বছর আগে ব্যাসল্ট লাভা দ্বারা গঠিত হয়েছে।
4. উপদ্বীপীয় মালভূমি
- এই মালভূমির বিচ্ছিন্ন অংশের নাম মেঘালয় মালভূমি।
- সমগ্র মালভূমি অঞ্চলটি পৃথিবীর এক প্রাচীন ভূখণ্ড গণ্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশ।
- উত্তর-পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বত পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত প্রায় 13.5 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।
ক) মধ্য ভারতের উচ্চভূমি
- পশ্চিমে আরাবল্লী; দক্ষিণের নর্মদা, শোন উপত্যকা, কাইমুর, বিন্ধ্য ও মহাকাল পর্বত, এবং উত্তর দিকে গাঙ্গেয় সমভূমি রয়েছে।
- অঞ্চলটি উত্তর-পূর্ব দিকে ঢালু।
১. উত্তর মধ্য ভারতের উচ্চভূমি
i) আরাবল্লী পর্বত
- এটি ভারতের প্রাচীনতম পর্বত অর্থাৎ প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত।
- আমেদাবাদ থেকে দিল্লী পর্যন্ত বিস্তৃত এর দৈর্ঘ্য 800 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 160 কিলোমিটার।
- গড় উচ্চতা 200 থেকে 500 কিলোমিটার।
- আবু পাহাড়ে অবস্থিত গুরুশিখর (1722 মিটার) আরাবল্লীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
ii) পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমি
- আরাবল্লীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। গড় উচ্চতা 200 থেকে 500 মিটার।
iii) মধ্য ভারতের মালভূমি
- একে মধ্য ভারতের পঠার অঞ্চল ও বলে।
- চম্বল এই অঞ্চলের প্রধান নদী।
- চম্বলের বিহর অত্যন্ত এবড়ো খেবড়ো একটি ব্যাডল্যান্ড।
- অঞ্চলটি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত।
iv) বুন্দেলখন্ড উচ্চভূমি
- গড় উচ্চতা 100 থেকে 300 মিটার। গ্রানাইট ও নিস শিলাদ্বারা গঠিত।
২. দক্ষিণ মধ্য ভারতের উচ্চভূমি
i) মালব মালভূমি
- লাভাদ্বারা গঠিত।
- রাজস্থান উচ্চভূমির দক্ষিণ-পূর্বে এবং বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অবস্থিত। গড় উচ্চতা 200 মিটার।
ii) বিন্ধ্য পর্বত
- 1050 কিলোমিটার দীর্ঘ। গড় উচ্চতা 300 মিটার। সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মানপুর (881 মিটার)।
iii) রেওয়া মালভূমি
- বুন্দেলখন্ড মালভূমি ও শোন নদীর মধ্যে অবস্থিত। লাভাদ্বারা গঠিত।
iv) নর্মদা উপত্যকা
- দক্ষিণে সাতপুরা এবং উত্তরে বিন্ধ্য পর্বতের মাঝে অবস্থিত এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী প্রবাহিত হয়। এখানকার বিখ্যাত জলপ্রপাত ধুয়াধার।
খ) পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি
১. ছোটনাগপুর মালভূমি
- রাচি মালভূমি, হাজারীবাগ মালভূমি, কোডারমা মালভূমি দ্বারা গঠিত।
- পরেশনাথ (1366 মিটার) এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
- পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় এর মালভূমির অংশ দেখা যায়।
- গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।
- ভারতের খনিজ ভান্ডার বলা হয় ছোটনাগপুর মালভূমিকে।
- ছোটনাগপুর মালভূমির পশ্চিমাংশে পাট অঞ্চল মালভূমির উচ্চতম অঞ্চল।
এখানকার প্রধান জলপ্রপাত
- i) হুড্রু ----- সুবর্ণরেখা নদীতে অবস্থিত।
- ii) জোনা---- Ranu নদীতে অবস্থিত।পুনযৌবন লাভের ফলে নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে। রাঁচি জেলায় অবস্থিত।
- iii) দশম---- Kanchi নদীতে পুনর্যৌবন লাভের ফলে নিকবিন্দুতে গঠিত হয়েছে। রাঁচি জেলায় অবস্থিত।
- iv) রাজরাপ্পা---- ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলায় অবস্থিত। দামোদর ও ভৈরবী নদীর সংযোগস্থলে গঠিত হয়েছে।
২. বাঘেলখন্ড
- মহাকাল পর্বতের পূর্বে অবস্থিত এবং মহানদীর উত্তরে অবস্থিত।
- বিন্ধ্য যুগের পাললিক ও গ্রানাইট শিলায় গঠিত।
৩. দণ্ডকারণ্য
- ছত্তিশগড় সমভূমির দক্ষিণে বাস্তার, কালাহান্ডি, কোরাপুট জেলা নিয়ে গঠিত।
৪. গড়জাত পাহাড়
- মহানদীর পূর্বে বোনাই, সিমলিপাল প্রভৃতি পাহাড় নিয়ে গঠিত।
৫. মহানদী অববাহিকা
- ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার শিহাওয়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি।
- মহানদীর বদ্বীপকে ছোট সুন্দরবন বলে।
- মহানদীর তীরবর্তী শহর--- কটক, সম্বলপুর।
- হিরাকুদ বাঁধ মহানদীতে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মাটির বাঁধ।
5. উপকূলীয় সমভূমি
এর আয়তন 75166 বর্গ কিলোমিটার। মূল ভূমিভাগে উপকূলীয় সমভূমির দৈর্ঘ্য 3100 কিলোমিটার এবং দ্বীপসমূহের উপকূল 1516 কিলোমিটার।
ক) পশ্চিম উপকূল
পাকিস্তান সীমা থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম উপকূলের দৈর্ঘ্য 1500 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 10 থেকে 25 কিলোমিটার।
১. গুজরাট উপকূল
i) কচ্ছ উপদ্বীপ অঞ্চল
কচ্ছ শব্দের অর্থ জলাময় দেশ। এই অংশে কচ্ছের রাণ অবস্থিত।
ii) কাথিয়াবার উপদ্বীপ অঞ্চল
লাভা গঠিত। গির ও গিরনার পাহাড় রয়েছে। গিরনার পাহাড়ের গোরক্ষনাথ শৃঙ্গ কাথিয়াবাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
২. কঙ্কন উপকূল
দমন থেকে গোয়ার দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। কোঙ্কন উপকূল ভারতের সর্বাধিক দীর্ঘ ভগ্নউপকূল। এর দৈর্ঘ্য 500 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 45 থেকে 47 কিলোমিটার। কোঙ্কন উপকূলের নিকট সলসেট ও এলিফ্যান্ট দ্বীপ রয়েছে।
৩. কর্ণাটক উপকূল
একে কানাড়া উপকূল বলে। গেরসোপ্পা জলপ্রপাত (সরাবতি নদীর উপর) এখানে অবস্থিত।
৪. মালাবার উপকূল
কেরল রাজ্যে অবস্থিত। উপকূলে অনেক টেরিস বা কয়াল দেখা যায়। এদের ব্যাকওয়াটারস বা লেগুন বলে। যেমন- ভেম্বানাদ কয়াল (80 কিলোমিটার দীর্ঘ), অষ্টমুদি, কায়মকুলম।
খ) পূর্ব উপকূল
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত দৈর্ঘ্য 1500 কিলোমিটার এবং প্রস্থ 100 কিলোমিটার।
১. উৎকল উপকূল
বাংলাদেশ থেকে চিল্কা উপহ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত।উৎকল উপকূল 700 কিলোমিটার দীর্ঘ। চিল্কা ভারত তথা এশিয়ার প্রধান উপহ্রদ।
২. অন্ধ্র উপকূল
চিল্কা উপহ্রদ থেকে কৃষ্ণা নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানকার প্রধান উপহ্রদ হলো- কোলেরু, পুলিকট।
৩. তামিলনাড়ু উপকূল
অপর নাম করমন্ডল উপকূল। কৃষ্ণা নদী থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানকার তাঞ্জাভুরকে দক্ষিণ ভারতের শস্যভান্ডার বলে।
6. ভারতের দ্বীপপুঞ্জ
ক) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ
১. আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (325 টি দ্বীপ)
- উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আন্দামানকে একত্রে বৃহৎ আন্দামান বলে।
- স্যাডেল পিক (732 মিটার) আন্দামানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।এটি উত্তর আন্দামান দ্বীপে অবস্থিত। এছাড়া অন্যান্য শৃঙ্গগুলি হল মাউন্ট থুলিয়ার, মাউন্ট হ্যালিয়ট।
- আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আয়তন 9943 বর্গ কিলোমিটার।
- আন্দামানের উত্তর সীমা থেকে হুগলী নদীর মোহনার দূরত্ব 901 কিলোমিটার। যা ভারতের অন্যান্য স্থানের তুলনায় কম।
- রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার (দক্ষিণ আন্দামান দ্বীপে অবস্থিত)।
২. নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (247 টি দ্বীপ)
- নিকোবরের রাজধানী কারনিকোবর এবং বৃহৎ নিকোবর দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
- ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু ইন্দিরা পয়েন্ট ( বৃহৎ নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দু) । এর পূর্ব নাম ছিল পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট।
- আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপগুলি প্রধানত আগ্নেয় শিলায় গঠিত।
- দুটি গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেয় দ্বীপ হলো ব্যারেন ( সুপ্ত) এবং নারকোন্ডাম (মৃত আগ্নেয়গির)।
- দক্ষিণ আন্দামান এবং কার নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মাঝে আছে 10° চ্যানেল।
- আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপগুলি মায়ানমারের আরাকান পর্বতশ্রেণীর প্রসারিত অংশ।
খ) আরব সাগরের দ্বীপ (36 টি)
- আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ হল লাক্ষাদ্বীপ। লাক্ষা, মিনিকয়় এবং আমিনদিভি নিয়ে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ গঠিত।
- লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জ মূলত প্রবাল দ্বীপ।
- কেরালার কোঝিকোট থেকে 110 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
- লক্ষদ্বীপ থেকে মিনিকয় দ্বীপ বিচ্ছিন্ন হয়েছে 9° চ্যানেল দ্বারা।