প্রবন্ধ - পরিবেশ সচেতনতা ও ছাত্রসমাজ
পরিবেশ সচেতনতা ও ছাত্রসমাজ
ভূমিকা –
“আমরা শক্তি, আমরা বল
আমরা ছাত্রদল।”
সত্যিই নজরুল কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ছাত্রদলের জয়গান। ছাত্ররাই তো পরিবারের গর্ব, প্রগতির গতি, সভ্যতার ভিত্তি ও অগ্রগতির পিলসূজ। ছাত্রদের সক্রিয়ভাবে সমাজ তথা পরিবার এর অগ্রগতিতে অংশগ্রহণই সমাজ তথা জাতিকে অনেকদূর এগিয়ে দিতে পারে। ছাত্রদের প্রধানকাজ পড়াশুনা হলেও পরিবেশ সচেতনতায় তাদের ভূমিকার দিকটি কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না।
পরিবেশ সচেতনতা কী ?
আমাদের চারপাশে গাছ পালা, ঘর বাড়ি, মানুষজন যা কিছু আছে। তার সবকিছু মিলিত অবস্থা হল পরিবেশ। আর সেই পরিবেশের উন্নতি ও তাকে কলুষমুক্ত রাখতে যেসব কার্যকলাপ করা হয় তাই হল পরিবেশ সচেতনতা। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থ ও কাজের বিনিময়ে অর্থ নেবার দিকটি কোনভাবে কাব্য নয়। আর পরিবেশ দূষণ রোধ ও সমাজ কল্যাণ দুটিই পরিবেশ সচেতনতার অংশ।
পরিবেশ চেতনায় ছাত্রদের অংশগ্রহণের একাল ও সেকাল –
প্রাচীন ভারতের ‘গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবেশ এতবেশি দূষণ জর্জরিত ছিল না তথাপি তারা পরিবেশের দূষণ রোধ ও নির্মলতা রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ পরিচর্যার মতো একাধিক কাজে অংশ নিত। আর বর্তমানে পরিবেশ দূষণ জর্জরিত হলেও ছাত্রছাত্রীরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এতবেশি ব্যস্ত থাকে ও আত্মকেন্দ্রিক হয় যে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা যায় না। তারা জানে না যে— Eduaction is an allround development.
পরিবেশ রক্ষার বিভিন্নক্ষেত্র—
বর্তমানে শিল্পায়ন ও নগরায়নের যুগে পরিবেশ এত বেশি দূষিত যে মানুষের অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন। তাই পরিবেশ তথা সমাজের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে ছাত্রদের অংশ তো নিতেই হবে। প্রথমত, পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য বৃক্ষরোপণ, বনমহোৎসব, অরণ্যসপ্তাহ, বিশ্বপরিবেশ দিবস উদযাপন করতে পারে। তাছাড়া সমাজের মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বিকাশ, শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে পারে। একই সাথে স্বার্থলোভী, অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের বিরুদ্ধে সরব হতে পারে। তবে এক দূষণমুক্ত ভবিষ্যৎ পাওয়া যাবে কারণ তাদের মনে রাখতে হবে-
“ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
পরিবেশ সচেতনতায় অংশগ্রহণের সুফল ও প্রয়োজনীয়তা —
পরিবেশ সচেতনতায় ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন - সুস্থ সুন্দর নির্মল পরিবেশ তৈরি করে তেমনি ছাত্ররা এর দ্বারা কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করে। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, দলে মিলে কাজ করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। সংকীর্ণতা, ধর্মীয় গোড়ামি, জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ তাদের কাছে নগণ্য হয়ে দাঁড়ায়। সবথেকে বড়ো কথা আদর্শ চরিত্র গঠনের মাধ্যমে বিশ্ব নাগরিক রূপে তো পরিগণিত হয়। কারণ তারা জানে-
“সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
ছাত্রদের পরিবেশ রক্ষায় অংশগ্রহণ না করার কারণ –
বর্তমানের আত্মকেন্দ্রিক যান্ত্রিক সভ্যতায় ছাত্ররা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ব্যস্ত থাকে। কারণ তাদের ভবিষ্যৎ পেশার কোন সুনিয়শ্চতা নেই। তাছাড়া রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, আর্থিক অস্বচ্ছলতা অনেক বেশি কাজ করে। আর সবথেকে বেশি হল অভিভাবক অভিভাবিকা বা শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাজ থেকে উৎসাহ না পাওয়া বা নিজস্ব সদিচ্ছার অভাব।
পরিবেশ রক্ষায় না অংশ গ্রহণের কুফল –
পরিবেশ সচেতনতা বোধ ছাত্রদের মধ্যে না জাগায় তাদের যে পরিবেশ ও - সমাজের প্রতি দায়িত্ব আছে তা বুঝতে পারে না। পরিবেশের দূষণ প্রতিরোধ হয় না, সমাজ কাঙ্ক্ষিত পথে এগোয় না। অর্থাৎ দুর্নীতিমুক্ত সমাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি তো থমকে দাঁড়ায়।
ছাত্রদের পরিবেশমুখী করার উপায়—
ছাত্রসমাজের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা জাগাতে, পরিবেশের সামগ্রিক উন্নতি করতে হলে প্রাথমিকভাবে ছাত্রদের ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদেরকে আরও বেশি উৎসাহ দিতে হবে। আর সরকারকে ছাত্রদের মনের বিকাশ ঘটাতে ও তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগাতে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে পরিবেশ বিজ্ঞান ও সচেতনতা বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের এই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে—
“মোদের চোখে বিশ্ববাসীর/স্বপ্ন দেখা হোক সফল
আমরা ছাত্রদল।”
উপসংহার—
একবিংশ শতাব্দীর শিল্পোন্নত বিশ্বে এখনও সামজের সর্বাপেক্ষা কর্ম সক্রিয় অংশ ছাত্রদের অংশগ্রহণের অভাব আছে। তাই কাঙ্ক্ষিত পথে পরিবেশ পরিবর্তন, সমাজ, জাতিও দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে ‘রক্তদানের পুণ্য' বিষয়ে জানা তরুণদের এ বাণী দ্বারা দেশ ও দশের জনজীবন উৎসর্গ করতে হবে এভাবে—
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।”