গঙ্গা নদী ( Ganga river)

 গঙ্গা নদী 


  গঙ্গা নদী (প্রায় 2510 কি.মি.) :

         গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম নদী।

উৎপত্তি —

     কুমায়ুন হিমালয়ের চৌখাম্বা শৃঙ্গের নিকট গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা (6600 মিটার) থেকে উৎপন্ন ভাগীরথী নদী সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। বদ্রীনাথের নিকট অলকানন্দা হিমবাহ থেকে উৎপন্ন অলকানন্দা, পিণ্ডার হিমবাহ থেকে উৎপন্ন পিণ্ডার ও কেদারনাথের নিকট ঘোড়াবাড়ি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন মন্দাকিনী নদীর মিলিত প্রবাহ দেবপ্রয়াগের নিকট ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত।

প্রবাহপথ- 

উচ্চগতি:-

      উৎপত্তিস্থল থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত প্রায় 320 কিলোমিটার বিস্তৃত প্রবাহপথ উচ্চগতির অংশ।

মধ্যগতি:-

       হরিদ্বারের নিকট নাগটিব্বা ও শিবালিক পাহাড় অতিক্রম করে গঙ্গা নদী সমভূমিতে এসে মিশেছে। সমভূমি অংশে গঙ্গা প্রথমে দক্ষিণ-পূর্ব, পরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের নিকট পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশ মধ্যগতি নামে পরিচিত।

নিম্নগতি:- 

         মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রবাহ পথ নিম্নগতি নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের নিকট গঙ্গা দু'টি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। প্রধান শাখাটি পদ্মা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে। অপর শাখাটি ভাগীরথী-হুগলী নাম ধারণ করে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপের নিকট বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে। এই নদী-মোহনার নিকট পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।


উপনদী—

[ক] বামতীরের উপনদী—

          হিমালয় থেকে উৎপন্ন বেশ কয়েকটি নদী গঙ্গার বামতীরে এসে মিলিত হয়েছে। এদের মধ্যে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা (কারনালী ও সরযূর মিলিত প্রবাহ), গণ্ডক (কালীগণ্ডক, কৃষ্ণ গণ্ডকী ও নারায়ণীর মিলিত প্রবাহ), বুড়িগণ্ডক, বাগমতী, কোশী (ইন্দ্রাবতী, তমকোশী, দুধকোশী, লিখুখোলা, সুনকোশী, অরুণ ও তামুর— এই সপ্তনদীর মিলিত প্রবাহ) এবং মহানন্দা উল্লেখযোগ্য।


[খ] ডানতীরের উপনদী—

            যমুনা গঙ্গার প্রধান উপনদী। এই নদী যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে এলাহাবাদের নিকট গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। হিমালয় পর্বত হতে উৎপন্ন যমুনার উপনদীগুলি হ'ল টোন্‌স ও গিরি। দক্ষিণের মধ্যভারতের উঁচুভূমি থেকে উৎপন্ন চম্বল, বেতওয়া, কেন প্রভৃতি নদী যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মধ্যভারতের উঁচুভূমি থেকে উৎপন্ন শোন নদী গঙ্গানদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। রিহান্দ শোন নদীর উপনদী।

          ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত বেশ কয়েকটি নদী ভাগীরথী- হুগলীর সঙ্গে মিশেছে। এদের মধ্যে বাঁশলই, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর,

        রূপনারায়ণ (শিলাই ও দারকেশ্বর), হলদি (কাঁসাই ও কেলেঘাই) প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য।


শাখানদী

   গঙ্গার প্রধান শাখানদী ভাগীরথী- হুগলী। মুর্শিদাবাদ থেকে হুগলী পর্যন্ত গঙ্গার নাম ভাগীরথী এবং হুগলী থেকে মোহনা পর্যন্ত এর নাম হুগলী নদী। এই নদী থেকে অসংখ্য শাখানদী ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে। এদের মধ্যে ভৈরবী, জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী, পিয়ালী, রায়মঙ্গল, গড়াই, বড়তলা, জামিরা, সপ্তমুখী, মাতলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।

উল্লেখযোগ্য শহর—

        গঙ্গা নদীর তীরে উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হ'ল—হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর, কলকাতা প্রভৃতি।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url