গোরা' উপন্যসটিতে রবীন্দ্রনাথের যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ কর।
'গোরা' উপন্যসটিতে রবীন্দ্রনাথের যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারার পরিচয় পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ কর।
স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় জাতীয়তাবাদের শক্তি ও দুর্বলতা দুটিই প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বদেশী আন্দোলনের ব্যর্থতা তাকে আত্মানুসন্ধানী করে তুলেছিল। তার পূর্ণপ্রকাশ ঘটেছিল ‘গোরা’উপন্যাসে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত 'প্রবাসী' পত্রিকায় 'গোরা' উপন্যাসকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করার সময় রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের; সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানবতার বিরোধ ও সমন্বয়কে তুলে ধরেছেন। জীবনের শুরুর দিকে গোরা ছিল আপাদমস্তক হিন্দু। তার ধারনা ছিল শুধুমাত্র হিন্দু ঐতিহ্যগত আদর্শ ও রীতিনীতির মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতি ও মঙ্গল একমাত্র সম্ভব। কিন্তু ঘটনাচক্রে গোরা যখন নিজের আত্মপরিচয় জানতে পারলেন অর্থাৎ তিনি ব্রাক্ষ্মণ নন তার দেহে বইছে খ্রিষ্টান রক্ত (আইরিশ দম্পতির পুত্র), তখন তিনি তার পালিত মা আনন্দময়ীর মধ্যে নিজের দেশমাতাকে খুঁজে পান, যার কাছে জাত-পাতের কোন বিচার নেই, ধর্মে মোহ নেই, ঘৃণা নেই যে শুধুই কল্যাণের প্রতিমূর্তি।
তাই রবীন্দ্রনাথ গোরার মাধ্যমে বলেছিলেন “আমি আজ ভারতবর্ষীয়। আমার মধ্যে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান কোনো সমাজের কোনো বিরোধ নেই। আজ এই ভারতবর্ষের সকলের জাত আমার জাত। সকলের অন্ন আমার অন্ন।” গোরা তার জীবন শুরু করেছিলেন হিন্দুত্ব দিয়ে, শেষ করলেন বিশ্ব মানবতায়।