ঔপনিবেশিক সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্য আইন প্রনয়ন করেছিল ?
ঔপনিবেশিক সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্য আইন প্রনয়ন করেছিল ?
বনভূমি সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষা, কৃষির প্রসার ইত্যাদির দোহাই দিয়ে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ও ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সরকার ভারতে পরপর দুটি অরণ্য আইন প্রনয়ন করলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিক মুনাফালাভ ও সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা।
১. ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কাঠ ও বনজ সম্পদকে উপনিবেশিক স্বার্থে ব্যবহার করে মুনাফা অর্জন ও অন্যদিকে কৃষি জমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি ।
২. ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজ তৈরির জন্য উৎকৃষ্ট শাল ও সেগুন কাঠের প্রয়োজন ছিল অন্যদিকে রেলপথের সম্প্রসারণ, রেলের কামরা, শহরের বাড়িঘর, আসবাবপত্রের জন্য প্রচুর কাঠের দরকার ছিল। তাছাড়া বনজ সম্পদ হিসেবে মধু, লাক্ষা, ঔষধি গুল্ম, ভেষজ উদ্ভিদের বাণিজ্যিক চাহিদা ক্রমশ বাড়ছিল।
৩. অপরিকল্পিত ভ্রাম্যমান ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী ও সুসংগঠিত কৃষি সম্প্রসারণ এবং ভ্রাম্যমান সশস্ত্র বিশৃঙ্খলা। সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শান্ত স্থায়ী কৃষিজীবী ও পশুপালক শ্রেণিতে পরিণত করার জন্য ঔপনিবেশিক সরকারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল অরণ্য আইন।
বলা বাহুল্য অরণ্য আইন অরণ্যচারী আদিবাসী সম্প্রদায়কে বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। অরণ্যের ওপর তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার; অর্থনৈতিক স্বাধিকার এবং সাংস্কৃতিক নিজস্বতার বিপন্নতাকে আদিবাসী সমাজ মেনে নিতে পারেনি, যার ফলশ্রুতি ছিল সাঁওতাল ও মুণ্ডাদের মতো আদিবাসী জনসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত এবং সংগঠিত বিদ্রোহ।