লর্ড মেকলে-কে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায়?
লর্ড মেকলে-কে কী এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা যায়?
ইংরেজ ইস্ট কোম্পানি এদেশে ক্ষমতা দখলের পর পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাদের ধারনা ছিল এদেশের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারিত হলে ভারতবাসীর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পাবে ও তারা ক্রমশ ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে উঠবে। ফলে তারা প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চাকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
কোম্পানি উৎসাহী না হলেও খ্রিষ্টান মিশনারীরা এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেয়, তবে তাদের উদ্দেশ্য ছিল আলাদা। সমকালীন শিক্ষার দীনতা উপলব্ধি করে ১৮১৩ খ্রিঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চার্টার আইনের মাধ্যমে কোম্পানি সরকারকে বাৎসারিক ১ লক্ষ টাকা শিক্ষাখাতে ব্যয় করার নির্দেশ দেয়। তবে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের ফলে তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি।
জনশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮২৩ খ্রিঃ জনশিক্ষা কমিটি তৈরি হয়। গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন তাঁর আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলেকে। মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের উগ্র সমর্থক ছিলেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে তিনি ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিঃ (২ ফেব্রুয়ারি) লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা 'মেকলে মিনিটস' নামে পরিচিত। মেকলে তাঁর প্রস্তাবে বলেন যে প্রাচ্যের শিক্ষা বৈজ্ঞানিক চেতনাহীন এবং পাশ্চাত্যের তুলনায় নিকৃষ্ট। প্রাচ্যের সভ্যতা দুর্নীতিগ্রস্থ ও অপবিত্র। তাই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত। এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রাসর ঘটলে ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি' অনুসারে ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ফলে এদেশে এমন একটি সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যারা রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ'। শেষ পর্যন্ত তার প্রস্তাবের সুপারিশ মেনে বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিঃ (৭ মার্চ) এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে সরকারের শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করেন— এই হিসেবে মেকলেকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলতে অত্যুক্তি হয় না।