উনিশ শতকে বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদের কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?

 উনিশ শতকে বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্তদেব কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন? 


     রাজা রাধাকান্তদেব শুধুমাত্র রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিপক্ষ বা রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের দলপতি ছিলেন না, তিনি ছিলেন উনিশ শতকে পাশ্চাত্য ও নারীশিক্ষার অন্যতম সমর্থক এবং প্রচারক। তিনি নিজের পরিবারের মহিলাদের শিক্ষাদানের জন্য ইংরেজি শিক্ষায়িত্রী নিযুক্ত করেছিলেন। ব্যাপটিস্ট মিশনারীদের উদ্যোগে নারীশিক্ষার জন্য ক্যালকাটা ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি স্থাপিত হলে তা রাধাকান্তদেবের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে। তবে রাজা রাধাকাস্তদেব সম্ভ্রান্ত মহিলাদের অন্তঃপুর শিক্ষা এবং ছোট ছোট বালিকাদের গৃহস্থ পাঠশালায় শিক্ষা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি শোভাবাজারে নিজ বাড়িতে বালিকাদের পড়ানোর এবং পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য পারিতোষিকেরও ব্যবস্থা করেছিলেন।

      নারী শিক্ষার মূল বাধা ছিল তৎকালীন রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মানসিকতা। তাই তাঁর উৎসাহ এবং সহযোগিতায় স্কুল বুক সোসাইটির প্রধান পণ্ডিত গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে লেখেন ‘স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক' নামে একটি পুস্তিকা, যেখানে আলোচিত হয় স্ত্রীলোকদের লেখাপড়া শেখা অশাস্ত্রীয় নয় এবং অতীতেও নারীরা সুশিক্ষিত হতেন— প্রভৃতি বিষয়।

       তবে রাজা রাধাকান্তদেব ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কাঠামোর মধ্যে থেকে নারী শিক্ষার বিস্তার চেয়েছিলেন তাই বেথুন সাহেব মেয়েদের জন্য আধুনিক ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল' গড়ে তুলতে উদ্যোগী হলে রাধাকান্তদের খ্রিষ্টধর্মের প্রসার ও হিন্দু ঐতিহ্যের অবক্ষয়ের আশঙ্কায় দ্বিধাগ্রস্থ হন। তবুও নারী শিক্ষার প্রসারে রাজা রাধাকান্তদেবের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url