বায়ুর চাপ

 

বায়ুর উচ্চচাপ এবং বায়ুর নিম্নচাপ - বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্রের নাম কি? বায়ুর চাপের গুরুত্ব/ বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ কি? সমচাপ রেখার বৈশিষ্ট্য

         অন্যান্য পদার্থের মত বায়ুমণ্ডল একটি পদার্থ। এটি মূলত গ্যাসীয় অনু দ্বারা গঠিত হওয়ায় এর নিজস্ব চাপ বা ওজন আছে।


বায়ুর চাপ কি?

      ভূপৃষ্ঠের ওপর প্রতি বর্গএকক স্থানে, সেখান থেকে বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বায়ু যে ওজোন বা চাপ দেয় বা প্রয়োগ করে, তাকে বায়ুমন্ডলের চাপ বলে।

     অন্যভাবে বলা যায়, বায়ুর অনুগুলির অবিরাম সংঘর্ষের ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে বায়ুর চাপ বলে।



বায়ুচাপ মাপার একক কি? 

    উ: মিলিবার 

সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ কত? 

    উ:   সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ 1013.25 মিলিবার।


বায়ুর উচ্চচাপ এবং নিম্নচাপ কি?

      ব্যারোমিটার যন্ত্রে পারদস্তম্ভের উচ্চতা 760 মিলিমিটার বা বায়ুর চাপ 1013.25 মিলিবারের বেশি হলে তাকে বাইরে উচ্চচাপ বলে।

      ব্যারোমিটার যন্ত্রে পারদস্তম্ভের উচ্চতা 760 মিলিমিটার বা বায়ুর চাপ 1013.25 মিলিবারের কম হলে তাকে নিম্নচাপ বলে।

       তবে বায়ুর উচ্চচাপ এবং নিম্নচাপ মাপার জন্য নির্দিষ্ট কোন মাপকাঠি নেই পাশাপাশি অবস্থিত দুটি অঞ্চলের মধ্যে চাপের পার্থক্য অনুসারে স্থির করা হয় কোন অঞ্চলটি উচ্চচাপ যুক্ত এবং কোন অঞ্চলটি নিম্নচাপ যুক্ত।


বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্রের নাম কি?

       বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্রের নাম ব্যারোমিটার।


বিভিন্ন প্রকার ব্যারোমিটার

১. টরিসেলি ব্যারোমিটার - ই টরিসেলি উদ্ভাবন করেছেন।

২. ফোর্টিন ্স ব্যারোমিটার - জে ফর্টিন আবিষ্কার করেন। মুল স্কেল এবং ভার্নিয়ার স্কেলের সাহায্যে 

৩. নির্ভুলভাবে বায়ুর চাপ পরিমাপ করা হয়।

৪. অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার -  Aneroid এর অর্থ ' without liquid'। এটি পারদ বিহীন ব্যারোমিটার।

৫. অল্টিমিটার - উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গে বায়ুচাপের পরিবর্তন বোঝা যায়। এই কারণে হেলিকপ্টার, 
বিমানে, পর্বতারোহীরা এগুলি ব্যবহার করে থাকে।

৬. ব্যারোগ্রাম - বায়ুচাপের পরিবর্তন সহজেই পরিমাপ করা যায় বলে বিমানে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।

           বর্তমানে বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যারোমিটারের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা হচ্ছে।



বায়ুর চাপের গুরুত্ব লেখ

১. বায়ু চাপের তারতম্যের কারণ এর জন্যই বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। 

২. বায়ুর চাপের পরিবর্তন হলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। 

৩. বায়ুর চাপ খুব কমে গেলে ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত প্রভৃতি হয়ে থাকে। 

৪. আবহাওয়া মানচিত্রে বায়ুর চাপের পার্থক্য দেখে আবহাওয়ার পূর্বভাস দেওয়া হয়।



বায়ুচাপের তারতম্যের কারণ কি? 

         পৃথিবীর সর্বত্র বায়ুর চাপ সমান নয়। কোথাও বায়ুর চাপ বেশি আবার কোথাও কম পরিলক্ষিত হয়। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন- 

১. বায়ুর উষ্ণতা: 

        উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুর চাপের বিপরীতমুখী সম্পর্ক রয়েছে। উষ্ণতা বেশি হলে বায়ু প্রসারিত হয় ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে। বায়ু হালকাভাবে উপর উঠে যায় ফলে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়। উষ্ণতা কমলে বায়ু সংকুচিত হয় ফলে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ফলে বায়ুর চাপ বাড়ে। এই বায়ু ভারী হওয়ায় নিচে নেমে আসে।


২. উচ্চতা 

         পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে বায়ুর অনুগুলির ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন অঞ্চলে ঘনসন্নিবিষ্ট ভাবে অবস্থান করায় বায়ুর ঘনত্ব বেশি হয়। ফলে বায়ুর চাপ বেশি। একারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাধিক। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে যাওয়া যায় বায়ুর ঘনত্ব ততই কমতে থাকায় বায়ুর চাপ কমতে থাকে।

      পরীক্ষা করে দেখা গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রতি 300 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ 34 মিলিবার করে কমে যায়। একারণে পর্বতারোহীদের পর্বতে ওঠার সময় অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয়। পর্বতের উপরে বায়ুর চাপ কম থাকায় জলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়, ফলে রান্না করতে অনেক বেশি সময় লাগে।


৩. জলীয় বাষ্প 

        জল বিশুদ্ধ বায়ু অপেক্ষা হালকা। এই কারণে জলীয় বাষ্প উপরের দিকে উঠতে থাকে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যত বেশি হবে বায়ুর চাপ তত কম হবে। অন্যদিকে শুষ্ক বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকায় বায়ুর চাপ বেশি হয়। বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বায়ুর চাপ কম। শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকায় বায়ুর চাপ বেশি হয়।


৪. পৃথিবীর আবর্তন গতি 

          পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য কেন্দ্র বহির্মুখী বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়। এই বলের প্রভাবে বায়ু ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যায়। যে স্থান থেকে বায়ু ছিটকে যায় সেখানে বায়ুর অভাবজনিত কারণে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ছিটকে যাওয়া বায়ু যেখানে সঞ্চিত হয় সেখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি করে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ু আবর্তন গতির জন্য ছিটকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় এখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলের নেমে আসার জন্য সেখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়েছে।


৫. স্থলভাগ এবং জলভাগের বন্টন 

         স্থলভাগ এবং জলভাগের তাপ গ্রহণ এবং বর্জন ক্ষমতা আলাদা হয়। গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত হয় বলে স্থলভাগে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। শীতকালে স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ফলে পার্শ্ববর্তী জলভাগের তুলনায় স্থলভাগে তাপমাত্রা কম থাকায় এখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।


সমচাপ রেখা ( Isobar) কি?

         Iso কথার অর্থ 'equal' বা সমান এবং bar অর্থ 'barometric pressure' ব্যারোমেট্রিক চাপ।


          ভূপৃষ্ঠে বা পৃথিবীপৃষ্ঠে যে সকল স্থানে বায়ুর চাপ সমান সেই সকল স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয় তাকে সমচাপ রেখা বলে। তবে রেখা আকার সময় বায়ুর চাপকে সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর চাপে পরিণত করা হয়।


সমচাপ রেখার বৈশিষ্ট্য

১. সমচাপ রেখায় বায়ুর চাপকে মিলিবার এককে প্রকাশ করা হয়। 

২. সমচাপ রেখাগুলি পরস্পরের সমান্তরালে থাকে। 

৩. দুটি ভিন্ন মানের সমচাপরেখা কখনোই পরস্পরকে ছেদ করে না। 

৪. সমচাপ রেখাগুলি যখন খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন বায়ুর চাপের পার্থক্য বেশি হয় বায়ু দ্রুত বেগে প্রবাহিত হয়। 

৫. সমচাপ রেখাগুলির বৃত্তাকারে থাকলে গভীর উচ্চচাপ বা নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

৬. সমচাপ রেখাগুলি দূরে অবস্থান করলে আবহাওয়া শান্ত প্রকৃতির থাকে। 

৭. সাধারণত  সমচাপ রেখাগুলি পূর্ব- পশ্চিমে বিস্তৃত হয়।

৮. বায়ুচাপের ঢাল সমপ্রেষ বা সমচাপ রেখার সঙ্গে সমকোণে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রতি একক দূরত্বে বায়ুচাপের যে পার্থক্য হয় তাকে বায়ুর চাপের ঢাল বলে। 

৯. অনুভূমিকভাবে বায়ুর চাপের ঢাল কমে যাওয়ায় একে অনুভূমিক চাপঢাল বলে। 

১০. সমচাপ রেখাগুলি যত কাছাকাছি অবস্থান করে বায়ুচাপ ঢাল তত বেশি হয়, একে উচ্চচাপ ঢাল(steep gradient) বলে। 

১১সমচাপ রেখাগুলি ধীরে ধীরে অবস্থান করলে বায়ুর চাপ ঢাল ততো দুর্বল হয় একে দুর্বল বায়ুর চাপঢাল (weak gradient) বলে।

১২দুটি সমচাপ রেখার মধ্যে বায়ুর চাপের পার্থক্য যত বেশি হবে বায়ুর চাপঢাল তত বেশি হবে। ফলে বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হবে। 

১৩সমচাপ রেখার মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্য কম হলে দুর্বল চাপঢাল সৃষ্টি হবে, ফলে বায়ু ধীর গতিতে প্রবাহিত হবে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url