নতুন সামাজিক ইতিহাস

 অতীতে ইতিহাস চর্চার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি। সুতরাং বলা যায় প্রথাগত ইতিহাস চর্চায় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইতিহাসের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হতো। প্রথাগত এই ইতিহাসচর্চা থেকে আলাদা করার জন্য নতুন ধরনের ইতিহাসচর্চাকে নতুন সামাজিক ইতিহাস বলা হয়। এই ইতিহাসের মূল আগ্রহ হলো অতীতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক কাঠামোর বিশ্লেষণ এবং এই কাঠামোগুলোর পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটিকে ব্যাখ্যা করা। নতুন সামাজিক ইতিহাস পদ্ধতিগত দিক থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র।



নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা কবে থেকে শুরু হয়?

নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চা শুরু হয় ১৯৬০ এর দশক থেকে। প্রথমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স গ্রেট ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আসে। অতীতে উচ্চবর্ণ মানুষের বিষয়ে ইতিহাসে অধিক আলোচনা করা হতো। নতুন সামাজিক ইতিহাস প্রবর্তনের পর উচ্চবর্ণের সঙ্গে নিম্ন বর্ণের ও প্রান্তিক মানুষেরাও আজ ইতিহাসের বিষয়।


প্রধান ঐতিহাসিকগণ:

নতুন সামাজিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক হলেন মার্ক ব্লখ, লুসিয়ান ফেবর, ফার্নান্দ ব্রদেল, লাঁদুরি প্রমূখ।



উপাদান:

প্রথাগত ইতিহাস চর্চায় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের বাইরে সরকারি নথিপত্রকেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপাদান বলে মনে করা হতো। নতুন সামাজিক ইতিহাসে উপাদানের বৈচিত্র বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ডায়েরি, হিসাব লেখার খাতা বা পারিবারিক অ্যালবাম থেকে শুরু করে সেই সময়কার গান-বাজনা, নাটক এমনকি কবিতা হয়ে উঠেছে নতুন সামাজিক ইতিহাস রচনার উপাদান।


বৈশিষ্ট্য:

এই ধরনের ইতিহাস চর্চার মূল যে বৈশিষ্ট্য গুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি হল,-

i. নিচ থেকে উপরের ইতিহাস: 

অতীতে রাজাদের বা সমাজের প্রতিষ্ঠাউচ্চ বন্ধের মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়া করা নিয়ে ইতিহাস চর্চা করা হতো। নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় নিম্ন বর্ণের বা প্রান্তিক মানুষের চিন্তাভাবনা, তাদের সমাজ, সংস্কৃতি থেকে সমগ্র সমাজের ইতিহাস বর্ণনা করার বিষয় ইতিহাসে প্রাধান্য পেয়েছে।


ii. বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিকরণ: 

সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু উচ্চবর্ণের মানুষকে ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত না করে প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষদেরও ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। 


ভারতে অগ্রগতি

ভারতের নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়েছিল ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক রঞ্জিত গুহ রচিত সাবল্টার্ন স্ট্যাটিজের প্রথম খন্ড প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ভদ্র, দীপেশ চক্রবর্তী, সুদীপ্ত কবিরাজ প্রমুখ  এই প্রকার ইতিহাসচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url