সিজিগি , অ্যাপোজি , পেরিজি , বানডাকা
সিজিগি, অ্যাপোজি, পেরিজি, বানডাকা
ক) সিজিগি (Syzygy)
গ্রিক শব্দ 'Suzugos' এর অর্থ একসঙ্গে বা সহযোগে থাকা।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে এই অবস্থানকে সিজিগি বা যোগবিন্দু বলে। চাঁদ পৃথিবীকে পরিক্রমণ করার ফলে প্রতিমাসে দুইবার চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী সিজিগি অবস্থানে আসে। সিজিগের দুটি অবস্থা,-
১. সংযোগ ( Conjunction)-
অমাবস্যা তিথিতে যখন পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে চাঁদ অবস্থান করে তখন সেই অবস্থাকে সংযোগ অবস্থা বলে।
২. প্রতিযোগ (Opposition)-
পূর্ণিমা তিথিতে যখন পৃথিবী যখন চাঁদ এবং সূর্যের মাঝে অবস্থান করে, তখন তাকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে।
খ) অ্যাপোজি (Apogee)
চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে পরিক্রমণ করে। এই পরিক্রমণ পথ উপবৃত্তাকার হয়।
উপবৃত্তাকার পথে চাঁদ পরিক্রমণ করার সময় সর্বদা পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব সমান থাকে না। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সর্বাধিক হয়, সেই অবস্থাকে অ্যাপোজি অবস্থান বলে। এই সময় পৃথিবীর থেকে চাঁদের দূরত্ব থাকে 4.07 লক্ষ কিলোমিটার। দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে চাঁদের আকর্ষণ বল কম হয়।
১. অ্যাপোজিয়ান জোয়ার বা অ্যাপোজি জোয়ার
যখন চাঁদ এবং পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ চাঁদ অ্যাপোজি অবস্থানে থাকে, সেই সময় যে জোয়ার হয় তাকে অ্যাপোজিয়ান জোয়ার বা অ্যাপোজি জোয়ার বলে। সাধারণ জোয়ারের থেকে অ্যাপোজি জোয়ার 20% কম প্রবল হয়।
গ) পেরিজি
উপবৃত্তাকার কক্ষপথে চাঁদ পৃথিবীকে পরিক্রমণ করার সময় চাঁদ এবং পৃথিবীর দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয়, সেই অবস্থাকে পেরিজি অবস্থান বলে। এই সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব থাকে 3.56 লক্ষ কিলোমিটার। দূরত্ব কম হওয়ার কারণে চাঁদের আকর্ষণ বল পৃথিবীর ওপর বেশি হয়।
২. পেরিজিয়ান জোয়ার বা পেরিজি জোয়ার
পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম হয় সেই অবস্থাকে পেরিজি অবস্থান বলে। এই সময় পৃথিবীতে যে জোয়ার হয়, তাকে পেরিজিয়ান জোয়ার বা পেরিজি জোয়ার বলে। পৃথিবী এবং চাঁদের দূরত্ব কম হওয়ার কারণে চাঁদের আকর্ষণ বল পৃথিবীর ওপর বেশি হয়। ফলে পৃথিবীতে জোয়ার সাধারণ জোয়ারের প্রায় 20% বেশি প্রবল হয়।
ঘ) বান ডাকা
ভরা কোটাল এর বা ভরা জোয়ারের সময় বিশেষত বর্ষাকালে সমুদ্রের জল নদীর মোহনার মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে উজানের দিকে অগ্রসর হলে তাকে বানডাকা বলে। বানডাকার ফলে নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়।
১.বানডাকার কারণ
প্রধানত তিনটি কারণে বর্ষাকালে নদীতে বান ডাকে,-
i) নদীর মোহনা ফানেল আকৃতির হলে নদীতে বান ডাকে।
ii) নদীর মোহনায় চড়া থাকলে বা নদী অগভীর হলে।
iii) নদীতে প্রবল স্রোত থাকলে।
২. উদাহরণ:-
হুগলি নদীতে ও সুন্দরবনের নদীগুলিতে, ইংল্যান্ডের টেমস নদী, লা প্লাটা প্রভৃতি নদীতে বান ডাকে।
ঙ) ষাড়াষাড়ি বান
বর্ষাকালে অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার তিথির ভরা জোয়ার বা ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল অনেক উঁচু হয়ে মোহনার মধ্য দিয়ে নদীর উজানের দিকে ষাড়ের মতো গর্জন করতে করতে এগিয়ে চলে, একে ষাড়াষাড়ি বান বলে।