মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় কেন?
বায়ুর কাজ প্রধানত উষ্ণ মরু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও সমুদ্রের উপকূলে কিছুটা হয়ে থাকে। উষ্ণ মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্যের কারণগুলি নিচে আলোচনা করা হলঃ
(১) মরু অঞ্চল বৃষ্টিহীনঃ
মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। মৃত্তিকা অনুর্বর, বালুময়। কাজেই গাছপালা জন্মায় না। চারিদিকে শুধু বালি আর বালি। সেই কারণে উষ্ণ মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ প্রবল হয়। কারণ বায়ুর চলার পথে কোনো বাধা থাকে না বলে বৃষ্টিহীন মরুভূমিতে বায়ুর কাজ বেশি হয় এবং নানারকম ভূমিরূপের সৃষ্টি করে।
(২) মরু অঞ্চলে মৃত্তিকা ও বালি আলগা :
উষ্ণ মরু অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ না থাকার জন্য গাছপালার শিকড়ের সাহায্যে মৃত্তিকাকে আঁকড়ে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। ফলে মাটি ও বালি আলগা ধুলোর মতো পড়ে থাকে। এই অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা এই আলগা বালি ও মাটি সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবাহিত হয়। এবং বালিয়াড়ি গঠনে সাহায্য করে।
(৩) মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রির উষ্ণতার পার্থক্যঃ
মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রির উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি। শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্যও অত্যন্ত বেশি হওয়ার জন্য মরু অঞ্চলের শিলায় প্রসারণ ও সঙ্কোচন বেশি হয় (যান্ত্রিক আবহবিকার)। ফলে শিলা সহজেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালিতে পরিণত হয়। এরকম যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা মরু অঞ্চলে আমরা তাপীয় প্রসারণের মাধ্যমে প্রস্তর চাঁই খণ্ডীকরণ, শল্কমোচন, ক্ষুদ্রকণা বিসরণ, মিলেট-সিড-স্যান্ডস প্রভৃতি ভূমিরূপ দেখতে পাই ।
(৪) মরুভূমির বালির সঙ্গে শিলার ঘর্ষণঃ
মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে বায়ুর ধাক্কায় মরুস্থিত প্রস্তরখণ্ডগুলির মধ্যে সংঘর্ষ ও অবঘর্ষ ঘটে। এর ফলে বড় বড় প্রস্তরখণ্ডগুলি ছোট ছোট বালুকণায় পরিণত হয়। এই অবঘর্ষের ফলে শিলাখণ্ডগুলি নানাভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ইয়াদাঙ, জিউগেন, গৌর, ভেন্টিফ্যাক্ট, ড্রেইকান্টার প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে।
(৫) যান্ত্রিক আবহবিকার:
মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে এবং দিন ও রাতের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি থাকার জন্য যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি হয়। যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলাখন্ড চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যা সহজেই বায়ু দ্বারা অপসারিত হতে পারে।
(৬) উদ্ভিদহীন পরিবেশ:
মরুভূমিতে বা মরু অঞ্চলে উদ্ভিদ না থাকার জন্য মৃত্তিকা কণা আলগা হয়। উদ্ভিদ বেশি থাকায় বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে বায়ুর কার্যের প্রাধান্য দেখা যায়।