বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ।

 যদিও বৃষ্টিপাতের অভাবে ভূপৃষ্ঠে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে, তথাপি মরু অঞ্চলগুলি একেবারেই বৃষ্টিহীন নয়। মাঝে মাঝে মরুভূমির কোনো কোনো স্থানে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়। এরকম আকস্মিক বৃষ্টিপাতের জন্য এই অঞ্চলের উচ্চভূমি থেকে অসংখ্য জলধারা প্রবল বেগে নেমে আসে। এই জলধারার সঙ্গে পাথরের টুকরো, নুড়ি, কাঁকর, সূক্ষ্ম শিলাচূর্ণ প্রভৃতিও প্রবল বেগে নিচে নেমে আসে। এর ফলে বায়ু ও জলের মিলিত কাজের ফলে মরু অঞ্চলে নানাপ্রকার ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। যেমন -

(১) ওয়াদি : 

      মরু অঞ্চলে হঠাৎ বা সাময়িক বৃষ্টিপাতের ফলে যে জলধারার সৃষ্টি হয়, ঐসব জলধারার সঙ্গে মরুভূমির মধ্যস্থিত শিলাচূর্ণ, নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি বাহিত হতে থাকে। ক্রমশ এই ক্ষয়জাত পদার্থ বৃদ্ধি পেয়ে একটি কর্দম ধারার সৃষ্টি করে। একদিন এই কর্দম ধারার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে মরুভূমির মাঝে যে জলস্রোতের দ্বারা নদীখাতের সৃষ্টি হয় তাদের ওয়াদি বলে। ওয়াদিগুলি বেশিরভাগ সময়ে মরুভূমির বুকে শুষ্ক নদী উপত্যকা হিসাবে অবস্থান করে।


(২) পেডিমেন্ট

‘পেডি' (Pedi) শব্দটির অর্থ পাদদেশ এবং 'মন্ট' (Mont) শব্দটির অর্থ পর্বত। কাজেই পেডিমেন্ট বলতে পর্বতের পাদদেশের সমতল ভূমিকে বোঝায়। মরুভূমির মধ্যে পর্বতের পাদদেশে বাতাসের ক্ষয়কাজের ফলে একপ্রকার প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়। এরকম সমতল ভূমির উপরের অংশ বেশ ঢালু হলেও তার নিচের অংশ মোটামুটি সমতল হয় বলে এখানে ছোট ছোট জলধারা বাহিত শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকড়, বালি, কাদা ইত্যাদি জমা হয়ে সমভূমি গড়ে ওঠে। এভাবে বায়ুর ক্ষয়কার্য ও জলধারার সঞ্চয়কাজের মিলিত প্রভাবে মরুভূমির মধ্যস্থিত পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেডিমেন্ট বলে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পেডিমেন্ট দেখতে পাওয়া যায়।

পেডিমেন্ট, বাজাদা ও প্লায়া 


(৩) বাজাদা

মরু অঞ্চলের মধ্যস্থিত পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশের প্রায় সমতল ভূমির বা পেডিমেন্টের নিচে অবনমিত অঞ্চলে জলধারা বাহিত যাবতীয় পদার্থ, যেমন: -নুড়ি, বালি, কাদা, কাঁকর ইত্যাদি দীর্ঘদিন ধরে স্তরে স্তরে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে বাজাদা বলে। বাজাদা কেবলমাত্র মরু অঞ্চলে জলধারার সঞ্চয়কাজের ফলে গড়ে ওঠে। আফ্রিকার সাহারা ও কালাহারি মরুভূমি, আরব মরুভূমি এবং ভারতের থর মরুভূমিতে বাজাদা দেখতে পাওয়া যায়।


(৪) প্লায়া 

মরুভূমিতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ফলে মরু মধ্যস্থিত পার্বত্য অঞ্চল থেকে ছোট ছোট জলধারা মরুভূমির অবনত অংশে জমা হয়ে যে লবণাক্ত হ্রদের সৃষ্টি করে তাকে প্লায়া বা স্যালিনা বলে। বৃষ্টির জলে চারিদিক থেকে অতিরিক্ত লবণ ধুয়ে এসে এইসব হ্রদের জলে জমা হয়। হ্রদের জল শুকিয়ে গেলে সেখানে লবণের স্তর পড়ে থাকে।

      মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এধরনের লবণাক্ত হ্রদকে প্লায়া, আফ্রিকায় শটস, মেক্সিকোতে বোলসন বলে। রাজস্থানের মরুভূমিতে এধরনের প্লায়া বা লবণাক্ত হ্রদের স্থানীয় নাম ধান্দস্।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url