বর্জ্য ব্যবস্থাপনা SAQ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা SAQ
১. বর্জ্য কি?
যে সকল পদার্থ আমরা বর্জন করতে চাই বা ফেলে দিতে চাই তাকে বর্জ্য বলে। যেমন- তরকারির খোসা, ছেঁড়া কাগজ, নোংরা জল প্রভৃতি।
২. বিষাক্ত বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য পদার্থ শরীরের ক্ষতি করে তাদের বিষাক্ত বর্জ্য বলে । যেমন - সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, অ্যাসবেস্টস প্রভৃতি।
৩. ই-বর্জ্য ( e- waste) কি?
বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য থেকে যে বর্জ্য নির্গত হয় তাকে ই বর্জ্য বলে। যেমন - কম্পিউটার, টিভি, মোবাইল ইত্যাদি বর্জ্য।
৪. সেলুলোজ কি?
কাগজ শিল্পের এক প্রকার বর্জ্য।
৫. কম্পোস্টিং কি?
বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা বর্জ্যের বিয়োজনকে কম্পোস্টিং বলে।
৬. সবাত কম্পোস্টিং (Aerobic composting) কি?
বায়ুর উপস্থিতিতে জীবাণু দ্বারা বর্জ্য পদার্থের বিয়োজনকে সবাত কম্পোস্টিং বলে।
৭. অবাত কম্পোস্টিং ( Anuerobic composting) কি?
বায়ুর অনুপস্থিতিতে জীবাণু দ্বারা বর্জ্য পদার্থের বিয়োজনকে সবাত কম্পোস্টিং বলে।
৮. স্ক্রাবার কি?
যে পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত বায়ু দূষণকারী পদার্থ ও গ্যাসের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিশুদ্ধ করা হয় তাকে স্ক্রাবিং বলে। যে যন্ত্রের সাহায্যে এটা করা হয় তাকে স্ক্রাবার বলে। স্ক্রাবার দুই প্রকার,- (i) শুষ্ক স্ক্রাবার এবং (ii) আর্দ্র স্ক্রাবার।
৯. " hazardous waste" কি?
সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, ডায়ক্সিন, অ্যাসবেস্টস ইত্যাদি বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ গুলোকে " hazardous waste" বলে।
১০. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য পদার্থ থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয় তাকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে এগুলো পরিবেশের এবং মানব শরীরের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন- ইউরেনিয়াম, পারমানবিক অস্ত্র, থোরিয়াম, স্ট্রনসিয়াম- 90, সিজিআম- 137 প্রভৃতি।
১১. সংক্রামক বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য থেকে জীবদেহে বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি হয় তাকে সংক্রামক বর্জ্য বলে। যেমন- ছুরি, সিরিঞ্জ, কাঁচি, সুঁচ, অপারেশনের বর্জ্য, গজ, ব্যান্ডেজ, বর্জিত ঔষধ প্রকৃতি।
১২. অসংক্রামক বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য পদার্থ থেকে জটিল বা গুরুতর রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই তাকে অসংক্রামক বর্জ বলে। যেমন- কাগজ, কাঠের টুকরো, প্লাস্টিক প্রভৃতি।
১৩. বিষাক্ত বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য পদার্থ জীবের দেহে গুরুতর অসুখ সৃষ্টি করে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে তাকে বিষাক্ত বর্জ্য বলে। যেমন- রাসায়নিক ভারী ধাতু, নানা রকম ক্ষতিকারক বিকিরণ, পরীক্ষাগার এবং হাসপাতালের বর্জ্য প্রভৃতি।
১৪. বিষহীন বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য বিষক্রিয়া তৈরি করে না এবং প্রাণীজগত ও পরিবেশের সংকটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না তাকে বিষহীন বর্জ্য বলে। যেমন- জীবের মৃতদেহ, মলমূত্র, মৃত উদ্ভিদে, শুকনো পাতা, ডালপালা ইত্যাদি।
১৫. জৈব বর্জ্য কি?
যে সকল বর্জ্য পদার্থ জীব দেহ থেকে উৎপত্তি হয় তাকে জৈব বর্জ্য বলে। যেমন- গাছের পাতা, ফুল, পচা ফল, শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, ডাবের খোলা, প্রাণীর মৃতদেহ, মলমূত্র প্রভৃতি।
১৬. জীব বিবৰ্ধন কাকে বলে?
কীটনাশকে ব্যবহৃত ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বনের বিষক্রিয়া জলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন জাতীয় কীটনাশকগুলি প্রাকৃতিক খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে প্রতিটি খাদ্যস্তরে ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এই প্ৰক্ৰিয়াকে জীব বিবৰ্ধন বলে।
১৭. ল্যান্ডফিল [ Landfill] বা ভরাটকরণ কাকে বলে?
কঠিন বর্জ্যপদার্থগুলি ফেলার জন্য পরিকল্পিত যে স্থান, সেই স্থানকে ল্যান্ডফিল ( Landfill) বা ভরাটকরণ বলে।
১৮. স্বাস্থ্যসম্মত জমিভরাট বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (sanitary landfill) কাকে বলে?
বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসচেতনভাবে কোনো নীচু জায়গাকে বর্জ্য পদার্থ দ্বারা ভরাট করা হলে তাকে স্বাস্থ্যসম্মত জমিভরাট বা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল (sanitary landfill) বলে।
১৯. ল্যান্ডফিল গ্যাস কি?
ল্যান্ডফিলের মধ্যে সঞ্চিত বর্জ্য পদার্থগুলিকে মাটির মধ্যেকার জীবাণু ভৌত ও রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে নানা ধরনের গ্যাস (মিথেন, CO2, হাইড্রোজেন সালফাইড) সৃষ্টি হয়, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাসগুলিকে ল্যান্ডফিল গ্যাস বলে।
২০. ডাম্পিং (dumping) বা বর্জ্যপদার্থ জমা বলতে কী বোঝো?
সাধারণভাবে শহরের দূরবর্তী কোনো নীচু খোলা জায়গায় বর্জ্য পদার্থ স্তূপাকারে জমা করা হলে তাকে ডাম্পিং (dumping) বা বর্জ্যপদার্থ জমা বলা হয়।
২১. লিচেট (leachate) কি?
বৃষ্টির জল বর্জ্য পদার্থের স্তুপ ধুয়ে জলাশয়ে বা ভৌমজলে মেশে। এই ময়লা বা আবর্জনা ধোয়া জলকে লিচেট (leachate) বলে।
২২. ইউট্রফিকেশন কি?
কৃষিকার্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার জলভাণ্ডারে সঞ্চিত হলে সেখানকার শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদের পোষক খাদ্যের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং জলে শৈবাল সাম্রাজ্য তৈরি হয়। শৈবালের এই হারে বৃদ্ধি পাওয়াকে ইউট্রফিকেশন বলে।
২৩. BOD (জৈবিক অক্সিজেন চাহিদা) কাকে বলে?
স্বাভাবিক অবস্থায় জলে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকে তাকে দ্রবীভূত স্বাভাবিক অক্সিজেন বলে। কিন্তু বিয়োজনকারী ব্যাকটিরিয়ার অতিরিক্ত বংশবৃদ্ধিতে জলে অক্সিজেনের চাহিদা হ্রাস পায়। ন্যূনতম যে পরিমাণ অক্সিজেন জলে উপস্থিত না থাকলে জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় তাকে জৈবিক অক্সিজেন চাহিদা (Biological Oxygen Demand বা সংক্ষেপে BOD) বল।
২৪. 3R কি?
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি পদ্ধতি , যেমন - Reduce ( বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস ), Reuse ( বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ), Recycle ( পুনর্নবীকরণ ) এদের একত্রে 3R বলে।
২৫. 4R কি?
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা র চারটি পদ্ধতি, যেমন- Reduce ( বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস ), Refuse ( বর্জন ), Reuse ( বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ), Recycle ( পুনর্নবীকরণ ) এদের একত্রে 4R বলে।
২৬. ফ্লাই অ্যাশ কি?
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ছাই। এটি দিয়ে ইট, রাস্তা বানানো হয়।
২৭. ভার্মি কম্পোস্টিং কি?
কেঁচো থেকে জৈব সার উৎপন্ন করার পদ্ধতি।
২৮. জঞ্জাল কি?
দৈনন্দিন কাজকর্মের ফলে উৎপন্ন এবং পৌরসভার পরিত্যক্ত কঠিন এবং অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে জঞ্জাল বলে।
২৯. কঠিন বর্জ্য কি?
মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াবলির ফলে উৎপন্ন অবাঞ্ছিত কঠিন পদার্থ ।
৩০. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বা পুনঃচক্রীকরণ কি?
পরিবেশের বিভিন্ন বর্জ্যকে সংগ্রহ করে পুনরায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাকে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বা পুনঃচক্রীকরণ বলে।
৩১. স্বচ্ছ ভারত অভিযান :
ভারত সরকারের একটি পরিকল্পনা, যার মূল বিষয়বস্তু বর্জ্য পরিষ্কার, শৌচালয় নির্মাণ, নদী দূষণ প্রভৃতি প্রতিরোধ করে দেশকে সুন্দর করা।
৩২. নির্মল বাংলা অভিযান :
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রকল্প, যার মূল বিষয়বস্তু জঞ্জাল পরিষ্কার, শৌচালয় নির্মাণ দ্বারা পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।